মানবতার পূজারী : দীপক পালিওয়াল
সৌরভকুমার ভূঞ্যা

দীপক
পালিওয়াল। নামটা এখন অনেকেরই জানা। করোনার কোপে
কাঁপছে গোটা পৃথিবী। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন।
এলোমেলো হয়ে গেছে জীবনের ছন্দ। গৃহবন্দী দশার কিছুটা অবসান হয়েছে ঠিকই কিন্তু জীবন
এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। বিশ্ব জুড়ে
বিরাজ করছে ভয়ংকর শীতল অন্ধকার। মহামারী গ্রাস করেছে বর্তমান সভ্যতাকে।
কোভিড-১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক। এর কোনো ঔষধ
নেই, ভ্যাকসিন নেই। এটা ঠিক এর মৃত্যু হার অনেকটা কম। কিন্তু সেটা
কোনো আশার কথা নয়। কেননা যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে দিন দিন তা যদি এইভাবে
চলতে থাকে তাহলে হয়তো একদিন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে।
সেই আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত মানুষ। করোনার এই চরম সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ
ভ্যাকসিন। বিশ্ববাসী গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে সেই দিনটির জন্য, যেদিন
আলোর খবরে উদ্ভাসিত হবে জীবন।
বিশ্বজুড়ে
জোর তৎপরতা চলছে ভ্যাকসিন আবিস্কারের। হাতে বেশি সময় নেই। বিজ্ঞানীরা
চেষ্টা করছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভ্যাকসিন আবিস্কার করার। ইতিমধ্যেই বেশ
কিছু ভ্যাকসিনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবই এখন পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। আর সকলের থেকে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির
গবেষণা। ইতিমধ্যে তাদের অগ্রগতি আশার আলো দেখাচ্ছে।
ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের হিউম্যান ট্রায়াল বেশ আশাপ্রদ। অক্সফোর্ডের
এই হিউম্যান ট্রায়ালে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে দীপক একজন।
নিজেকে এমন এক মহৎ কাজে উৎসর্গ করে তিনি দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন, দেশকে বিশ্বের
আসনে আরও একবার আলোকিত করেছেন। তিনি শুধু নামেই দীপক নন, সত্যি সত্যিই তিনি দীপক—ঘোর
অন্ধকার সময়েও তার সেই আলো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।
দীপক
পালিওয়ালের আদি বাসস্থান রাজস্থানের জয়পুরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে
তিনি সবচেয়ে ছোটো। বর্তমানে তিনি লন্ডনের বাসিন্দা।
দশ বছরের কিছু সময় ধরে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। পেশায় তিনি এক
ফার্মা কোম্পানির কনসালট্যান্ট। তার স্ত্রী পলও একজন ফার্মাসিস্ট।
দেশে রয়েছে মা, দাদা ও দিদি।
ছোটোবেলা
থেকেই দীপক বেশ ডাকাবুকো, কিছুটা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। তাই কখনও মনের
খেয়ালে হঠাৎ করে গাড়ি চালিয়ে চলে যান রাজস্থান থেকে সুদূর ব্যাঙ্গালোর, কখনও বা
আকাশের বুকে ঝাঁপ দেন (স্কাই ডাইভিং)। পাশাপাশি নিয়মিত রক্তদান কিংবা প্লেটলেট দান করে
থাকেন তিনি। তবে এসব তো সামান্য কাজ। তিনি হয়তো
মনে মনে চাইছিলেন বড়ো কিছু কাজ করতে।
গোটা বিশ্ব
করোনায় আক্রান্ত। দিন দিন অন্ধকার ছেয়ে ফেলছে মানুষের জীবন।
নেতিবাচকতা গ্রাস করছে মন। এসব দেখতে দেখতে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হচ্ছিলেন দীপক।
মন চাইছিল কিছু করতে। কিন্তু চাইলেই তো কাজ করা যায় না।
তিনি চিকিৎসক কিংবা গবেষক নন, প্রশাসনিক কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত নন।
তাহলে কীভাবে তিনি এই করোনা যুদ্ধে নিজেকে সামিল করবেন? কিন্তু কথায় আছে, মন থেকে
কিছু চাইলে সুযোগ ঠিক এসে যায়। দীপকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে।

এপ্রিলের ১৬
তারিখ তার কাছে মেল আসে। স্ক্রিনিং-এর জন্য ডেকে পাঠানো হয় তাকে।
নির্দিষ্ট দিনে তিনি পৌঁছে যান সেন্ট জর্জ হাসপাতালে। ট্রায়ালের
জন্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল স্ক্রিনিং।
এখানে দীর্ঘসময় ধরে তার নানাবিধ পরীক্ষা হয়। কয়েকদিন পর ইমেল মারফৎ
তাকে জানানো হয় তিনি ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। সঙ্গে একটি পেপার পাঠানো হয় ভ্যাকসিনের বিরূপ
প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা জানিয়ে। অঙ্গহানি থেকে মৃত্যুর সম্ভবনার কথাও লেখা ছিল সেই
রিপোর্টে। এই প্রথম একটু ভয় পান দীপক। সেটা
ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে নয়। আসলে এতদিন ব্যাপারটা
একটা অনিশ্চেয়তার মধ্যে ছিল। সেটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় অদ্ভুত একটা ভয়, অদ্ভুত এক
শিহরণ বয়ে যায় শরীরে। তবে
তা ক্ষণিকের। তিনি মনস্থির করেন ট্রায়ালে
যাবেন।
জয়পুরের
বাড়িতে তিনি কিছু জানান না। কেননা তিনি জানতেন এমন সিদ্ধান্তের কথা বললে
মা-দাদাদের কাছে বাধা আসবে। তারা মানা করবে। কিন্তু তিনি
এই ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন মা-দাদা-দিদিরা
মানা করলে তিনি এই কাজে এগোতে পারতেন না। কেননা তাদের নিষেধ
অমান্য করে কাজ করতে গেলে অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকে না।
তাছাড়া তাদের অমতে কাজ করাটা ভালো দেখায় না। তাই তিনি
স্থির করেন বাড়িতে জানাবেন না। যদিও পরে তিনি একসময় বলেছেন, ‘না জানিয়ে কাজটা করা
ঠিক হয়নি। এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাড়ির লোকেদের বিশেষ
করে মাকে জানানো উচিৎ ছিল।’ তবে এটাও ঠিক জিজ্ঞেস করলে তিনি অনুমতি পেতেন না।
এক সাক্ষাকারে তার মাও সেই কথা বলেছেন। মানা
করাটাই স্বাভাবিক।
জয়পুরে
কাউকে কিছু না জানালেও স্ত্রী পলকে বললেন সব কথা। স্বভাবতই পল
প্রথমে কিছুতেই রাজি হননি। তিনি নিজে একজন ফার্মাসিস্ট। তাই ভালো করে জানেন ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
হলে কী কী সমস্যা হতে পারে। কিন্তু
দীপক নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। স্ত্রীকে তিনি বোঝাতে সক্ষম হন।
মানবজাতির প্রতি তার এই দায়বদ্ধতা দেখে পলও মত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
পরে এক সাক্ষাৎকারে পল বলেছেন, ‘খুব বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে কেউ এটা করতে পারে না।
ওর এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করার দরকার ছিল। তাই রাজি হই, পাশে থাকি।’
যাই হোক,
দীপকের ভ্যাকসিন নেওয়ার দিন স্থির হয়। যেদিন তিনি যাবেন তার আগের রাতে একটা ভয়ংকর মেসেজ
আসে তার মোবাইলে। তাকে বলা হয় ভ্যাকসিন নেওয়া এক স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যু হয়েছে।
এমন খবর পেলে যে কারুরই মনোবল ভেঙে পড়ার কথা। কিন্তু দীপক
আলাদা ধাতুতে গড়া। খবরটা পাওয়ার পর তিনি ইন্টারনেট খুলে স্টাডি করেন এবং জানতে
পারেন এটা একটা ফেক নিউজ। পরে তিনি মজা করে বলেছিলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি থেকে ওই মেসেজ ছড়িয়ে
পড়েছিল।’ এই চরম দূর্দিনেও মানুষ কী করে এমন ফেক নিউজ ছড়ায় তা ভেবে
তিনি আশ্চর্য হন। তবে ওই মৃত্যু যদি সত্যিও হত তাহলেও কিন্তু তিনি নিজের
সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতেন না। দীপকের কথায়, ‘সবাই যদি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায় তাহলে তো কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ল হবে না।’
পরের দিন
দীপক পৌঁছে যান সেন্ট জর্জ হাসপাতালে। ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে তাকে দুটি ভিডিও দেখতে দেওয়া হয়।
সেখানে দেখানো হয় ভ্যাকসিনের সাম্ভাব্য খারাপ প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে।
তাকে বলা হয় চাইলে তিনি তখনও নাম প্রত্যাহার করতে পারেন। কিন্তু দীপক
জানিয়ে দেন ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত।
যে কোনো
ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে প্রথমে অ্যানিম্যাল ট্রায়াল হয়। তা করতে এক
থেকে দুই বছর সময় লাগে। কিন্তু যেভাবে করোনা মারাত্মক দ্রুত গতিতে মানুষের
জীবনকে তছনচ করে দিচ্ছে তাতে করে দ্রুত ভ্যাকসিন চাই। তাই মাত্র চার
মাস অ্যানিম্যাল ট্রায়ালের পর হিউম্যান ট্রায়ালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এত কম সময়ে অ্যানিমাল ট্রায়ালের পর হিউম্যান ট্রায়ালে বিপদের একটা ঝুঁকি থেকে যায়
কিন্তু পরিস্থিতি যা ভয়াবহ তাতে ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না গবেষকদের।

অক্সফোর্ডের সেই পরীক্ষার ফল আশাপ্রদ। গত সোমবার মেডক্যাল জার্নাল Lancet-এ সেই খবর প্রকাশিত হয়েছে। কেননা গবেষকরা যা চাইছিলেন তার থেকে কয়েকগুন ভালো ফল পান। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর দেখা গেছে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির পাশাপাশি Killer T-Cell তৈরি হয়েছে যেটা অত্যন্ত ভালো খবর। কেননা অ্যান্টিবডি একটা সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিন্তু Killer T-Cell কয়েক বছর ধরে শরীরে কাজ করে। যাই হোক, ইতিমধ্যে এই ভ্যাকসিনের পরবর্তী হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে দশ হাজার মানুষের শরীরে এই ভ্যাসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এবার প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের শরীরেও এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। শুধুমাত্র লন্ডন নয়, অন্যকিছু দেশ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশেও এই ট্রায়াল চলছে।

এখন বিশ্বাবাসী
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে সেই আলোক সকালের। তবে ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ফলাফল যাই হোক,
মানব কল্যাণে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন তারা মানবতার
পূজারী। দীপক পালিওয়াল তাদেরই একজন। সব থেকে বড়ো কথা এই হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য
তিনি কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণও দাবি করেননি। উল্টে বলেছেন, ‘এই ট্রায়ালের সঙ্গে
যদি কোনো আর্থিক ব্যাপার থাকত তাহলে হয়তো আমি এই কাজে এগোতাম না। আমি
মানবজাতির কল্যাণে কাজ করতে চেয়েছি।’ কিন্তু হঠাৎ করে তিনি কেন এমন করতে গেলেন?
জীবনকে বাজি রেখে এমন কাজ করতে যাওয়া নিছক কোনো আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়। অনেক
ভাবনা-চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সেই ভাবনাচিন্তার একটাই নির্যাস ‘আত্মনো
মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’--অর্থাৎ আত্মার শান্তি ও জগতের কল্যাণ। কোথা থেকে এমন
ভাবনা এল তার মাথায়? তার জবাবও তিনি দিয়েছেন।
বছরের শুরু
থেকেই করোনার আক্রমণ। মাস কয়েক যেতে না যেতেই গোটা বিশ্বে করোনার প্রকোপ শুরু
হয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে একটাই খবর করোনায় আক্রান্ত আর মৃত্যু। চারিদিকে অন্ধকার।
মানুষ গৃহবন্দী। বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এককথায় একেবারে টালমাটাল মানুষের জীবন
ও সভ্যতা। তিনি দেখেছেন ডাক্তার-নার্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকেরা
নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করছেন। ‘আমিও ভাবলাম যদি কোনো ছোটো ভূমিকা
পালন করতে পারি। তাই এই সিদ্ধান্ত।’ ‘ছোটো ভূমিকা’—হ্যাঁ, বার বার তিনি এই
কথাটাই বলেছেন নিজের কাজ সম্পর্কে। এটা তার বিরাট মনের উদারতা। কিন্তু করোনার
ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, মানবজাতির কল্যানে কতো বড়ো কাজ তিনি
করেছেন। ভ্যাকসিন যদি সফল হয়, সেই সাফল্যের পেছনে তারও একটা অবদান থেকে যাবে। আর
যদি সফল নাও হয় তাহলেও তার ভূমিকাকে কোনোভাবে ছোটো করা যাবে না। সংকীর্ণ
স্বার্থের গণ্ডী থেকে বেরিয়ে মানবজাতির কল্যাণে এমন দুঃসাহসী, মহৎ ভূমিকা পালন করে
তিনি যেমন সাধারণের থেকে অসাধারণত্বের স্তরে নিজেকে উন্নীত করেছেন তেমনি বিশ্ব
দরবারে তুলে ধরেছেন ভারতের মুখ। সমগ্র ভারতবাসী আজ তাই তার এই প্রয়াসকে কুর্ণিশ
জানাচ্ছে।

কবি কামিনী রায়ের বিখ্যাত সেই ‘সুখ’ কবিতাটি এই প্রসঙ্গে বড়ো বেশি করে মনে পড়ে যায়।
“পরের
কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ
জীবন মন সকলি দাও,
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ;
'সুখ' 'সুখ' করি কেঁদ না আর,
যতই কাঁদিবে, যতই ভাবিবে
ততই বাড়িবে হৃদয় ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী 'পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ;
'সুখ' 'সুখ' করি কেঁদ না আর,
যতই কাঁদিবে, যতই ভাবিবে
ততই বাড়িবে হৃদয় ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী 'পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”
সংকীর্ণ
স্বার্থের ওপরে উঠে অপরের জন্য ভাবা, একে-অপরের জন্য বাঁচা, সকলের মঙ্গল
কামনা---এসব কথা যুগ যুগ ধরে বলা হয়ে আসছে। কিন্তু আদপে কি তার পরিপূর্ণ প্রয়োগ
আমরা দেখতে পাই বাস্তবের মাটিতে? মোটেও নয়। কিন্তু করোনা নামক একটি ক্ষুদ্র
ভাইরাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, শুধু নিজের কথা ভাবলেই চলবে না।
বাঁচতে হলে সকলের কথা ভাবতে হবে। কিন্তু তাও কি আমাদের শিক্ষা হচ্ছে? এই মহা
সংকটকালেও আমরা দেখছি রাজনৈতিক দলাদলি, নানান দূর্ণীতি, স্বার্থসিদ্ধির জন্য অসৎ
উপায় অবলম্বন, মানুষকে ঠকানো প্রভৃতি। নিষ্ঠুর সত্যি হল, এসব ছিল, আছে এবং
আগামীতেও থাকবে। এই অন্ধকার কখনওই পুরোপুরি দূর হয়ে যাওয়ার নয়। তবে এই অন্ধকারের
মাঝে কিছু মানুষ মানব কল্যাণের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সাধারণ মানুষ থেকে হয়ে ওঠেন
মানবতার পূজারী, যারা মানুষকে ঈশ্বর জ্ঞানে সেবা করে নিজেরাই হয়ে ওঠেন মানব-ঈশ্বর।
২০ জুলাই, ২০২০।
@ সৌরভকুমার ভূঞ্যা
No comments:
Post a Comment