Friday, May 8, 2020

পাঠ প্রতিক্রিয়া - ‘ছিঁচকাঁদুনে’



‘ছিঁচকাঁদুনে’
উল্লাস মল্লিক


অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ---উল্লাস মল্লিকের ‘ছিঁচকাঁদুনে’ গল্পটি পড়ে এটাই মনে হল আমার৷ এককথায় অসাধারণ৷ ছোটো এবং নির্মেদ৷ অল্প পরিধির মধ্যে গল্পকার ফুটিয়ে তুলেছেন একটি ছোট্ট মেয়ের বিজয়ার ঠাকুর বিসর্জনীর অনুভূতির কথা৷ ফুলুর কথা পড়তে পড়তে চোখের সামনে ফুটে ওঠে আমাদেরই আশেপাশের সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির এক কিশোরীর মুখ৷ যার মনে রয়েছে গভীর আবেগ, পাশাপাশি তীব্র আত্মসম্মানবোধ৷ ফুলুর অনুভূতির বর্ণনার মধ্য দিয়ে গল্পকার তার চরিত্রটিকে আমাদের সামনে জীবন্ত করে তুলেছেন৷ পাশাপাশি নোটন চরিত্রটিও আমাদের একেবারে কাছের৷ আপাতদৃষ্টিতে দুষ্টু ও খারাপ ছেলে নোটনকে একদম পছন্দ করে না ফুলু৷  নোটনের ওপর তার খুব রাগ কেননা সে সবসময় তার পেছনে লাগে৷ বিসর্জনের দিন তার কান্না দেখে নোটন তাকে ক্ষেপায়৷ এবারের বিসর্জনের দিন ফুলু তাই প্রতিজ্ঞা করে সে মোটেই কাঁদেব না৷ নোটনকে দেখিয়ে দেবে সে ছিঁচকাঁদুনে নয়৷ প্রায় সে জিতেই যাচ্ছিল৷ কিন্তু বিসর্জনের রাতে সেই চোখের জল ঝরল তার৷ তবে বিসর্জনের দুঃখে নয়, নোটনের কথা ভেবে৷ অন্ধকারে প্রতিমার কাঠামো তুলে আনতে গিয়ে নোটন যখন প্রায় মরো মরো তখন নোটনের কথা ভেবে আর বুকের কান্নাটাকে চেপে রাখতে পারেনি ফুলু৷ আর এখানেই তার চরিত্রের সরলতা ও উত্কর্ষতা গভীরভাবে ফুটে উঠেছে৷
উল্লেখ্য, গত বছর আনন্দমেলা পুজো সংখ্যায় উল্লাস মল্লিক ‘মুড়কি মুড়ি’ নামে যে গল্পটি লিখেছিলেন তার বিষয়বস্তুও ছিল পুজো৷ পরিস্কার করে বললে পুজোর প্রতিমা গড়া৷ দয়াল জ্যাঠা প্রতিমা গড়তে গিয়ে প্রতিবারই কিছু না কিছু ভুল করে ফেলেন। কিন্তু শেষবার, যেবার দয়াল জ্যাঠার ছেলে বাবিন কাশ্মীরে লড়াই করতে গিয়ে মারা যায়, সেবার পুজোয় কার্তিকের মুখে অবিকল বাবিনের মুখ ফুটিয়ে তুলেছিলেন৷ প্রতিমার থিমে শুধুমাত্র আধুনিকতা নয় একটা বার্তাও যেন দিতে চেয়েছিলেন৷ সেবার তার প্রতিমায় কোনো খুঁত ছিল না, যা তার জীবনে প্রথমবার৷ আর তারপর তিনি আর কোনাদিন প্রতিমা গড়েননি৷
দুই বছরের গল্পের বিষয়বস্তু পুজো৷ প্রথমবার প্রতিমা গড়া অর্থাৎ যেন বোধন দিয়ে শুরু কিন্তু শেষ হয়েছে বিসর্জনে৷ আর এবার শুরু বিসর্জন দিয়ে কিন্তু তার শেষে যেন বোধনের সুর৷ এ যেন বোধনে বিসর্জন আর বিসর্জনে বোধন৷ দুই গল্পকে ছুঁয়ে আছে এক দুঃখের বাতাবরণ৷ তবে দুই গল্পের বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অদ্ভুত একটা ছবি ফুটে উঠেছে---দুঃখ দয়াল জ্যাঠা কিংবা ফুলু দুটো চরিত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ দুঃখকে যদি অন্ধকার ধরি তাহলে এই বিকাশ নিঃসন্দেহে আলো৷ তাই গল্পের শেষে মনে হয়েছে এ যেন অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ৷ আর এই উত্তরণের ছবি আঁকায় গল্পকারের শৈল্পিক লেখনীর ছোঁওয়া আমাদের আলাদা করে টানে৷ লেখককে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাই৷

No comments:

Post a Comment