সংবর্ধনা
সৌরভকুমার ভূঞ্যা
রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে
থমকে দাঁড়ায় গায়ত্রী। দেখে ঘরের মধ্যে উদ্বিগ্নভাবে পায়চারি করছে প্রকাশ।
বুঝতে বাকি থাকে না কোনো ঘোরতর সমস্যায় পড়েছে। সমস্যা ব্যাপারটা নতুন নয়
প্রকাশের জীবনে। একটা রাজনৈতিক দলের ছোটোখাটো নেতা
সে। রোজই প্রায় নানাবিধ সমস্যা লেগে থাকে। বিয়ের প্রথম প্রথম প্রকাশকে সমস্যায়
পড়তে দেখলে সে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ত। কিন্তু এখন ব্যাপারটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। তাই আজকাল
প্রকাশকে সমস্যায় পড়তে দেখলে গায়ত্রী হুটহাট প্রশ্ন করে না। কিন্তু আজ প্রকাশের
উদ্বিগ্নতার ব্যাপারটা কেমন যেন অন্যরকম। চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায়। দরজার কাছে
এসে জিজ্ঞেস করে, ‘কী হল? তখন থেকে দেখছি উদ্বিগ্নভাবে ঘরময়
পায়চারি করছ। কোনো সমস্যা হয়েছে?’
সমস্যা বলে সমস্যা, একেবারে ঘোরতর সমস্যা। জীবনে অনেক সমস্যার
সম্মুখীন হয়েছে প্রকাশ, কিন্তু এমন সমস্যা এই প্রথম। এর আগে বাহুবল, লোকবল কিংবা
রাজনৈতিক ক্ষমতায় কত বড়ো বড়ো সমস্যা তুড়ি মেরে সমাধান করে দিয়েছে। কিন্তু, আজকের
সমস্যাটা তাকে একেবারে টলিয়ে দিয়েছে। তার সমস্ত ভাবনার তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে।
উত্তর না পেয়ে গায়ত্রী আবারও বলে, ‘কিছু বলছ না কেন?
আমার তো টেনশন হচ্ছে।’
এবার মুখ খোলে প্রকাশ। ‘না না, তেমন কিছু নয়। টেনশনের কারণ নেই।’
প্রকাশের কথা বিশ্বাস না হলেও এ-নিয়ে আর কথা বলে না গায়ত্রী। বেরিয়ে
আসতে যাবে, এমন সময় প্রকাশ বলে, ‘শোনো, আমাকে এককাপ কড়া চা দিয়ো যাও তো।’
সন্দিগ্ধ চোখে তার দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে যায় গায়ত্রী।
প্রকাশ ভাবতে থাকে, চিঠিটায় ভুল দেখা হয়নি তো! কিন্তু একবার নয়,
বেশ কয়েকবার চিঠিটা পড়েছে। ভুল হওয়ার কথা নয়। তবুও মনটা খুঁতখুঁত করতে থাকে।
চিঠিটা আবারও পড়ে। চিঠি মনে আমন্ত্রণপত্র। সম্মাননা জ্ঞাপনে তার নাম লেখা আছে।
বিশিষ্ট কবি হিসেবে তাকে সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সবুজ সংঘ। ভাবে
ভুল করে তার নাম ছাপা হয়নি তো! কিন্তু তা কী করে হবে! ক্লাবের সম্পাদক নিজে এসে
চিঠি দিয়ে গেছে। শুধু চিঠি দেওয়া নয়, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়ে
গেছে। তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে, কার্ডে নাম ছাপার আগে তার অনুমতি নিতে পারেনি
বলে বারেবারে দুঃখপ্রকাশ করেছ। এসব তো মিথ্যা হতে পারে না। তাই পুরো ব্যাপারটার
কেমন তালগোল পাকিয়ে যায় তার।
আবারও কার্ডটার দিকে তাকায় প্রকাশ। ‘বিশিষ্ট কবি’ শব্দ দুটি অবিশ্বাসী
লাগে তার কাছে। অনেক ভেবেও মনে করতে পারে না কোনো
কবিতা-টবিতা লিখেছে কি না। লেখা দূরে থাক, শেষ কবে কবিতা পড়েছে মনে করতে পারে না।
বর্তমান ছেড়ে অতীতে ডুব দেয় প্রকাশ। একেবারে
স্কুলজীবন থেকে শুরু করে। স্মৃতি রোমন্থনে অনেক অস্পষ্ট ঘটনাও মনে হাজির হয় কিন্তু
তার মধ্যে কবিতা সম্পর্কিত কিছু পায় না। স্কুল-জীবন ছেড়ে আসে কলেজ জীবনে। কিন্তু
সে আরও বড়ো এলোমেলো সময়। স্কুল-জীবনে তবু বইখাতা সঙ্গে ছিল। কলেজ জীবনে এসে
সেসব সঙ্গছাড়া হয়ে গিয়েছিল। কলেজে বছর গড়াতে না গড়াতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে
গিয়েছিল সে। মিটিং-মিছিল, ধর্ণা-বক্তৃতা, মাঝেমাঝে মারদাঙ্গা—এসব করে তিন বছরের
কলেজ জীবনকে টেনে টেনে বছর ছয়-সাত পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। তারপর যতদূর সম্ভব
চক্ষুলজ্জার খাতিরে আর কলেজমুখো হয়নি। রাজনীতিতে ভিড়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর এক
নেতার ছাতার নীচে থাকতে থাকতে এখন সে নিজেই ছোটোখাটো নেতা।
যাই হোক, অনেক ভেবেও প্রকাশ কবিতার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক খুঁজে
পায় না। সহসা একটা ব্যাপার তাকে উত্তেজিত করে তোলে। মিটিং-মিছিলের
প্রয়োজনে নিয়মিত শ্লোগান লেখে সে। উপরতলার নেতানেত্রীরাও তার শ্লোগানের রীতিমতো
প্রশংসা করে। প্রায়শই সে বলতে শোনে, তার শ্লোগানের মধ্যে নাকি আগুন আছে। শুনলেই মানুষের
শরীরে উত্তেজনার স্রোত বয়ে যায়। সহসা ভাবে, এগুলো কবিতা নয় তো? ব্যাপারটা মাথায়
আসতে তার সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যায়।
একটা আলমারিতে সামান্য কিছু বইখাতা, কাগজপত্র আছে তার। তার মধ্যে
কিছু শ্লোগান থাকলে থাকতে পারে। তন্নতন্ন
করে সেই আলমারিটায় খুঁজতে থাকে প্রকাশ। কিন্তু একটা শ্লোগানও খুঁজে পায় না।
হতোদ্যম না হয়ে আবারও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।
চা নিয়ে ঢুকে বেশ অবাক হয় গায়ত্রী। প্রকাশ একাগ্রচিত্তে বইখাতার
পাতা উল্টে যাচ্ছিল। কৌতূহল চাপতে না পেরে বলেই ফেলে, ‘একমনে কী খুঁজছো?’
‘কবিতার খাতা।’ বলেই চমকে ঘুরে তাকায় প্রকাশ। বুঝতে পারেনি কখন
গায়ত্রী ঘরে ঢুকেছে। এতটাই নিজের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল যে মুখ ফস্কে সত্যিটা বেরিয়ে
গেছে। তার জবাব শুনে গায়ত্রীর মুখ থমথমে হয়ে যায়। আপাত শান্ত হলেও এখন তার
চোখে-মুখে ফুটে ওঠে তীব্র রাগ। চায়ের কাপটা ঠকাস করে টেবিলে রেখে দিয়ে বেশ
ঝাঁঝালো সুরে বলে, ‘কবিতার খাতা!’
গায়ত্রীর এমন রাগের কারণ বুঝে উঠতে পারে না প্রকাশ।
নেতা হিসেবে দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও এখন স্ত্রীর মেজাজের সামনে বেশ মিইয়ে যায়। গায়ত্রী
ক্রুদ্ধ স্বরে বলে, ‘কবিতার খাতা তোমার কাছে কেন? কবিতা কে? তার
সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক? এতিদন তোমার অনেক বন্ধু-বান্ধবের নাম শুনেছি কিন্তু
কবিতার নাম তো আগে কোনোদিন শুনিনি! রীজনীতির নামে ভেতরে ভেতরে এসব চলছে! এমন
আকুল হলে খাতা খুঁজছো কেন? কবিতা কি
খাতায় শ্লোগান লিখে পাঠিয়েছে নাকি প্রেমপত্র?’
গায়ত্রীর রাগের কারণটা এবার মাথায় ঢোকে প্রকাশের। এমনটিতে মাথাটা অশান্ত
ছিল। গায়ত্রীর এমন অবান্তর কথা শুনে মেজাজ আরও বিগড়ে যায়। একটু তিরিক্ষে মেজাজে
বলে, ‘কবিতা কোনো মেয়ে নয়।’
‘তাহলে কি ছেলে?’
‘কবিতা মেয়েও নয়, ছেলেও নয়। কবিতা কবিতা।’
‘কীসব হেঁয়ালি করছ।’
‘কবিতা বোঝ না! মাধ্যমিক পাশ করেছ যে! বইতে কবিতা পড়োনি?’
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে এবার একটু লজ্জা পায় গায়ত্রী। মেজাজটা সামলে
নিয়ে বলে, ‘কার কবিতার খাতা?’
‘কার আবার, আমার।’
গায়ত্রী চরম বিস্ময়ের সুরে বলে, ‘তোমার কবিতার
খাতা! তুমি কবিতা লেখ?’
‘কেন, আমার কি কবিতা লিখতে মানা?’
‘তা কেন? কিন্তু কোনোদিন তো শোনাওনি। বাসররাতেও তুমি আমায়
শ্লোগান শুনিয়েছ।’
‘তখন লিখতাম না। পরে লিখেছি। মানে বেশিদিন হয়নি।’
‘তাহলেও আমাকে কোনোদিন শোনাওনি।’
পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে প্রকাশ লাজুক সুরে বলে, ‘তেমন কী আর লিখতে পারি। দু-চারটা কখনও-সখনও লিখেছি। তাও বলার মতো নয়। এই
দেখছ না, কোথায় লিখে রেখেছি খুঁজে পাচ্ছি না।’
স্বামীর দুঃখে গায়ত্রীও কিছুটা যেন সমব্যাথী হয়ে পড়ে। বলে, ‘আমি
একবার খুঁজে দেখব?’
‘আমিই খুঁজে পাচ্ছি না, তুমি কী করে পাবে? তুমি তোমার কাজ কর। আমি
খুঁজে দেখি।’
মন না চাইলেও মেনে নেয় গায়ত্রী। কিন্তু প্রকাশকে দিয়ে শপথ করিয়ে নেয়
বিবাহ-বার্ষিকীতে তাকে কবিতা শোনাতেই হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজি হয় প্রকাশ।
এলাকার বিধায়ক রত্নেশ্বর হাজরা একসময় কবিতা লিখতেন। কলেজ লাইফে একটা
কবিতার চক্রও ছিল তার। কিন্তু কলেজে থাকতে থাকতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কলেজ লাইফ
পেরোনোর পর আর কবিতা লেখা হয়নি। তবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সভায় গেলে মাঝে মাঝে
নিজের কবিতা লেখার প্রসঙ্গ তোলেন। কখনওবা নিজের দু-একটা লাইনও শুনিয়ে দেন।
সবুজ সংঘ এলাকার প্রাচীন ক্লাব। খুব নামডাক। সারা বছর ধরে তাদের
নানান সাংস্কৃতিক কর্মসূচি থাকে। তারা অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করছিল ক্লাবে একটি
জিমনাসিয়াম করার। তার জন্য তারা পরিকল্পনা করেছিল এলাকার সাংসদকে বাত্সরিক
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আনার। কিন্তু প্রপার চ্যানেলে যোগাযোগ না করতে পারলে
সাংসদকে আনা সম্ভব নয়। আর সেই প্রপার চ্যানেল হল রত্নেশ্বর হাজরা। সাংসদের সঙ্গে
তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। রত্নেশ্বরকে খুশি করতে তারা স্থির করে তাকে কবি হিসেবে
সংবর্ধনা দেবে।
প্রস্তাবটা পাওয়ার পর রত্নেশ্বরের যে লোভ হয় না তা নয় কিন্তু মাস
কয়েক পরে ভোট। তিনি বোঝেন তাকে যদি এই সম্মান দেওয়া হয় বিরোধীরা এই নিয়ে
ব্যাঙ্গ করবে, বিরূপ প্রচার করবে। তাই তিনি রাজি হন না। ওদিকে
উদ্যোক্তারাও মরীয়া, রত্নেশ্বরকেই কবি-সংবর্ধনা দেবে। অনেকবার না বলা সত্ত্বেও
যখন তারা নাছোড়বান্দা তখন রত্নেশ্বর বলেন, তিনি সম্মাননা নিতে পারবেন না। বদলে
তার কোনো প্রিয় মানুষকে এই সম্মান দেওয়া হোক।
সেটাই তার সম্মানপ্রাপ্তি। সংঘের সদস্যদের কোনো আপত্তি ওঠে না। তাদের মুখ্য
উদ্দেশ্য রত্নেশ্বরকে খুশি করা। রত্নেশ্বরের কাছে তারা জানতে চায় তার প্রিয়
মানুষের কথা।
মাস কয়েক পরে ভোট। এই ভোটে ভালো ফল করতে গেলে প্রকাশকে যে হাতে
রাখা দরকার সেটা রত্নেশ্বর বোঝেন। এমনিতে যা অবস্থা তাতে প্রকাশ যদি হাত ফস্কে
বেরিয়ে যায় তাহলে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। তাকে খুশি করতে তার নামটাই প্রস্তাব করে
রত্নেশ্বর। তার ধারনা ছিল প্রকাশ যেহেতু এত সুন্দর শ্লোগান লেখে, নিশ্চয়ই তার কবি-প্রতিভা
আছে। প্রকাশ-অপ্রকাশ যে নামই হোক তাতে সবুজ সংঘের আপত্তি নেই। তাদের দরকার
রত্নেশ্বরের কৃপা। তাই তার কথাই সংবর্ধনার মাপকাঠি হয়ে যায়।
সভার শেষ অনুষ্ঠান, সম্মাননা জ্ঞাপন পর্ব। প্রকাশের বুকের মধ্যে
অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। সামনে প্রচুর দর্শক। এর মধ্যে তারও লোক রয়েছে
অনেক। পাঁচটা মারুতি ভর্তি করে লোক এনেছে সে।
প্রকাশকে উত্তরীয়, শাল, মেমেন্টো দেওয়া হয়। ক্লাবের সাংস্কৃতিক
সম্পাদক মানপত্র পাঠ করে তার হাতে তুলে দেয়। এরপর ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়
কিছু বলার জন্য।
কথা শুরু করতে একটু সময় নেয় প্রকাশ। রাজনৈতিক
বক্তব্য দেওয়ায় সে দক্ষ। কিন্তু এই অনুষ্ঠান অন্য ধরনের। প্রাথমিকভাবে ক্লাব ও
সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নিজের অনুভূতির কথা বলতে শুরু করে। কথা বলতে বলতে
একটা সময় ফ্লো এসে যায়।
ক্রমশ বক্তব্যের শেষ দিকে চলে আসে প্রকাশ। দীর্ঘ্য অভ্যাসবশত কিছুটা
রাজনৈতিক ঢংয়ে সে বলে চলে, ‘বর্তমানে একটা খারাপ সময়ে মধ্য
দিয়ে আমরা চলেছি। চারিদিক অনাচার, অনাসৃষ্টি। সমাজে বিশৃঙ্খল অবস্থা। সমাজকে এই
অবস্থা থেকে মুক্ত করতে অসির চেয়ে মসীই বেশি দরকার। আর এই মসী অর্থাৎ কলম নিয়ে
যারা কাজ করেন সেইসব কবি-সাহিত্যিকদের সমাজে এখন বেশি দরকার। আমাদের উচিত এই সব
কবি-সাহিত্যিকদের হাত...।’
‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও।’ হাতের সঙ্গে এই শ্লোগানে অভ্যস্ত শাকরেদরা
‘হাত’ শোনামাত্রই পেছন থেকে এই আওয়াজ তুলে দেয়।
প্রকাশ থমকে যায়। বুঝতে পারে গণ্ডগোলটা কোথায়। তাদের ভুল ভাঙানোর
জন্য বলতে যায়, ‘কবিদের হাত শক্ত করতে হবে।’ কিন্তু শক্ত
পর্যন্ত গিয়ে আর এগোতে পারে না। পেছন থেকে আওয়াজ আসে...
‘শক্ত হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে
দাও।’
‘কবিদের শক্ত হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।’
থমকে যায় প্রকাশ। চারিদিকে একটা থমথমে ভাব। সকলের নজর প্রকাশের
দিকে। তার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে গেছে। মেজাজ গরম
হয়ে যায় তার। নিজের লোকেদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে, ‘দূর হটো।’
পেছনে আওয়াজ ওঠে—‘দূর হটো, দূর হটো।’
‘কবিরা দূর হটো।’
প্রকাশ বিপর্যস্ত। ওদিকে পেছন থেকে সম্মিলিত শ্লোগান ভেসে আসতে
থাকে...
‘কবিদের শক্ত হাত... ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।’
‘কবিরা দূর হটো...দূর হটো, দূর হটো।’
প্রকাশের হাতে আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আয়োজক সংস্থার মুখেও চুনকালি
পড়ে গেছে। কিন্তু উপস্থিত জনতার মেজাজ গরম হয়ে যায়। প্রকাশের লোকেদের সঙ্গে
প্রথমে তর্কাতর্কি পরে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। দু-একজন প্রকাশকে লক্ষ করে জুতো
ছুঁড়তে থাকে। একটা গিয়ে লাগে তার মাথায়। অবস্থা বেগতিক দেখে মানপত্র মেমেন্টো সব
ফেলে মঞ্চ থেকে নেমে পেছন দিকে দৌড় লাগায় প্রকাশ।