Thursday, May 14, 2020

বিশের ডায়েরি-১৮


করোনা যুদ্ধের সৈনিক



শীঘ্রই প্রকাশিত হবে





নির্বাসনের রোজনামচা-১৭                                                               নির্বাসনের রোজনামচা-১৯

Tuesday, May 12, 2020

বিশের ডায়েরি-১৭


পরিযায়ী প্রাণ
ভাত ও ছাদের গল্প

হাঁটছে শিশুটি। বয়স কতো হবে? দেড় বছর কিংবা দুই বছর। বাড়ির উঠোন, পার্ক কিংবা খেলার মাঠ নয়, শিশুটি হাঁটছে রাস্তার ওপর। গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড দাবদাহে তপ্ত রাস্তার ওপর দিয়ে ছোটো ছোটো পা ফেলে গুড়গুড় করে হাঁটছে শিশুটি। হাঁটছে নয়, বলা ভালো দৌড়োচ্ছে। গায়ে একটা সাধারণ জামা আর হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ঢিলেঢালা প্যান্ট। সামনে মাথায় বোঝা নিয়ে বাবা মা। কিছুটা পিছিয়ে পড়া বাচ্চাটি দৌড়োচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেকথা বলার সুযোগ নেই এখন। তার লক্ষ্য সামনের বাবা-মা। ভাইরাস কি শিশুটি জানে না। মৃত্যুর ভয় কি তার জানা নেই। সে শুধু জানে সামনের ওই দুটি মানুষের কাছাকাছি তাকে থাকতে হবে। চালচুলোহীন, রুগ্ন, শীর্ণ ওই দুটি মানুষের কাছে আছে নিরাপত্তার সমস্ত আশ্বাস। ওদের কাছে থাকতে পারলে আর কোনো ভয় নেই। পেটে খাওয়ার পড়েছে কিনা ঠিক নেই। হয়তো দুটো শুকনো বিস্কুট আর রাস্তার কল থেকে নেওয়া সামান্য একটু জল। তাই খেয়েই ছুটছে বাচ্চাটি। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে সে জানে না। সে শুধু জানে ওই দুটো মানুষ যেখানে যাবে ওকে সেখানে যেতে হবে। এইভাবে যেতে যেতে হয়তো সে পৌঁছে যাবে কোনো একটা ঘরে। ঘর আজ এক অলীক স্বপ্নের মতো ওই মানুষগুলির কাছে। ওদের এখন কোনো ঘর নেই। পথই ওদের ঠিকানা। পথ ওদের আশ্রয়। এই পথ পার হয়ে যেতে পারলে হয়তো একটা ছোট্ট ঘর ওদের পরম মমতায় কোলে টেনে নেবে। কিন্তু এই পথ ফুরোবে তো? পারবে তো পৌঁছোতে সেই বাড়ির ঠিকানায়? সহসা অচেনা হয়ে যাওয়া এই বন্ধুর পথ হারিয়ে ফেলবে না তো তাদের ঠিকানা? পথের জীবন, লিখবে না তো পথেই মরণের গান? উন্মুক্ত আকাশের নীচে এই পথই আপাতত ওদের আশ্রয়। ওদের কোনো অতীত নেই, কোনো ভবিষ্যৎ নেই, ওরা সবসময়ই বর্তমান। যে বর্তমান জুড়ে লেগে থাকে চরম দারিদ্র আর কঠোর সংগ্রামময় জীবনের কাহিনি। এটা কোনো একজন মানুষের কথা নয়, এই জীবন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষের। সব পরিচয় হারিয়ে ওদের এখন একটাই পরিচয়...ওরা পরিযায়ী।
    পরিযায়ী শব্দটি শুনলে আমাদের চোখের সামনে সর্বাগ্রে ভেসে ওঠে পাখিদের ছবি। শীতের সময় আমরা দেখি উত্তরের এলাকা থেকে (সাইবেরিয়া) বহু পাখি আমাদের দেশে আসে। শীতকালে উত্তরের ওইসব জায়গায় এত ঠান্ডা পড়ে যে পাখিদের পক্ষে জীবনধারণ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। খাদ্যেরও সমস্যা হয়। তাই তাদের এই পরিযান। শুধু পাখি নয়, অনেক প্রাণীদের মধ্যেও বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই পরিযান দেখা যায় খাদ্য এবং বংশবৃদ্ধির তাড়নায়। অর্থাৎ সমস্যাটা খাদ্য, বাসস্থান ও বংশ বিস্তারের। এককথায় পশু-পাখিদের এই পরিযান আসলে তাদের বেঁচে থাকার লড়াই, তাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম। বেঁচে থাকার এমন সংগ্রাম দেখা যায় মানুষের মধ্যে। যারা আমাদের কাছে পরিচিত পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে।
    গ্রামাঞ্চলের বহু গরিব মানুষ রুটিরুজির তাড়নায় পাড়ি দেয় এক জেলা থেকে আরেক জেলা, এক রাজ্য থেকে ভিন্ন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর একটা বিরাট অংশ তাদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তাদের কথা আমরা সেভাবে জানতে পারি না। কিন্তু বিশ্ব মহামারী আর লকডাউনের কারণে এরাই এখন আলোচনায়। মহামারী সংকটে চরম দূর্দশার শিকার পরিযায়ী শ্রমিকরা। ভারতবর্ষে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও লক্ষে পৌঁছোয়নি কিন্তু করোনার কারণে দূর্দশার শিকার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা এর কয়েক গুন। সেটা লক্ষ ছাড়িয়ে কোটিতে পৌঁছে গেছে।
    ভারতবর্ষে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা বারো থেকে চোদ্দ কোটি। এদের মধ্যে ফসলের কাজে বাইরে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি। বাকি পরিযায়ী শ্রমিকেদর মধ্যে একটি বিশাল অংশ নির্মান কাজের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও শিল্প কারখানা, পোশাক কারখানা, খনির কাজ প্রভৃতির সঙ্গেও অনেকে যুক্ত। অনেকে গৃহস্থলীর কাজে যুক্ত। কেউ কেউ ভিন রাজ্যে রিক্সা, টোটো, ট্যক্সি প্রভৃতি চালায়। কেউ দোকান কিংবা হকারির কাজ করে। এদের বিরাট অংশ অসংগঠিত। মহামারী বিপর্যয়ে গরিবেরা ভয়ংকর দূর্দশার শিকার। কিন্তু তাদের থেকেও খারাপ অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকদের।
    করোনা মহামারী মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ২২ মার্চ একদিনের জনতা কার্ফুর ডাক দেন। তার ঠিক একদিন বাদে সারা দেশে একুশ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। শুরুর দিকে বেশকিছু পরিযায়ী শ্রমিক নানাভাবে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হয়। তবে সেই সংখ্যা মাত্র পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজারের মতো। বেশিরভাগ আটকে পড়ে। আসলে ব্যাপারটা এতখানি ঘোরালো হয়ে যাবে অনেকেই বুঝতে পারেনি। লকডাউন ব্যাপারটি নিয়ে অনেকের স্বচ্ছ ধারনা ছিল না। তাই প্রথমটা ফেরার ব্যাপারটা সেভাবে মাথাচাড় দেয়নি। তাছাড়া ফিরব বললেই তো ফেরা যায় না। মাসের তৃতীয় সপ্তাহ। বেতন হয়নি। তারওপর কাজকর্ম সব ছেড়ে হুট করে ফিরে আসা, যদি লকডাউন শেষ হলে আবার কাজ শুরু হয়... নানারকম টানাপোড়নও হয়তো কাজ করছিল মনের মধ্যে। আবার অনেকে ফিরতে চেয়েও ফিরতে পারেনি যেহেতু সবরকম পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। করোনা মোকাবিলায় লকডাউন অবশম্ভাবী ছিল। তবে অনেকের বক্তব্য ছিল এইসব শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করে লকডাউন ঘোষণা করলে তাদের এই দুর্দশার মধ্যে পড়তে হত না। এর পাল্টা যুক্তিও ছিল। লকডাউন করে যে যেখানে আছে তাকে সেখানে আটকে দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ যতটা বেশি সম্ভব আটকে দেওয়া। কেননা করোনা যে জ্যামিতিক হারে সংক্রমণ ছড়ায়, তাতে করে আমাদের দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই প্রাথমিক যে তাগিদ ছিল সংক্রমণ ঠেকানো।
    যুক্তি পাল্টা যুক্তি যাই থাক, এটাই বাস্তব যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভয়ংকর দূর্দশার শিকার। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ঘোষণায় বলেছিলেন শ্রমিকরা যে যেখানে আছে সেখানে থাকবে। সেই রাজ্য তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। তাদের কাজ বন্ধ হলেও বেতন কাটা যাবে না। বাড়িভাড়া না দিতে পারলে বাড়িওয়ালা তাদের ঘর থেকে বের করতে পারবে না। বিভিন্ন রাজ্য সরকারও একে অপরের মধ্যে চিঠিপত্র আদান প্রদান করে শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যাপারে কথা বলে। কিন্তু বাস্তবটা বড়ো কঠিন। ঘোষণা আর বাস্তবে যে বিস্তর ফারাক থেকে গেছে তা শ্রমিকদের দূর্দশা দেখে সহজেই অনুমেয়। অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। মালিকের বাড়তি অর্থ দিয়ে সাহায্য করা দূরে থাক, অনেকে বেতন পাননি। অনেকের বাড়িওয়ালা তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এদিকে রোজগার বন্ধ। হাতে যেটুকু টাকা ছিল তাই দিয়ে কিছুদিন চলে অনেকের। কিন্তু সে ফুরিয়ে যেতে সময় লাগেনি। সরকারী সাহায্য, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য হয়তো কিছু কিছু মিলেছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। অনেকে সেই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অস্থায়ী শিবিরগুলিতেও খাওয়ার-দাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কখনও পর্যাপ্ত খাওয়ার মেলেনি, কখনও অভিযোগ উঠেছে খাওয়ারের মান নিয়ে। এই নিয়ে শ্রমিকদের অভিযোগ, কান্নাকাটি, একটু খাওয়ারের আকুতি কিংবা বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধের ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় বারে বারে দেখতে পাই। করোনা ভাইরাস নয়, ক্ষুধা নামক ভাইরাস তাদের বিপর্যস্ত করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে।
    লকডাউন ঘোষণার পর বহু মানুষ বাড়ি ফেরার কথা ভাবে। কাজকর্ম বন্ধ, রোজগার নেই। কাজ কবে শুরু হবে, আদৌ শুরু হবে কিনা নিশ্চয়তা নেই। বাইরে বসে থাকলে একদিন হয়তো না খেতে পেয়ে মরতে হবে। তাছাড়া বিপদের সময় সবাই চায় পরিবারের সঙ্গে থাকতে। বাড়ির লোকেরাও চায় ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে আসুক। কিন্তু ফিরবে কী করে? সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। ঘরের ফেরার তাগিদে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। কেউ কেউ সাইকেলে পাড়ি দেয়। সামান্য কিছু মানুষ লুকিয়ে কোনো মাছের ট্রাক, বয়লার, মালভর্তি লরি প্রভৃতিতে ফেরার চেষ্টা করে। পথ অনেক। কিন্তু ফিরতে হবে। তাই শত শত মাইলের দূরত্বও তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। সেইসব মানুষদের অনেকে ফিরতে পেরেছে নিজের বাড়ি। অনেককে রাস্তায় আটকে দিয়েছে পুলিশ। কাউকে রাস্তায় পুলিশের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দেখা গেছে পুলিশ তাদের দিকে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। খাওয়ার, জল তুলে দিয়েছে তাদের। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, কখনও ব্যক্তিবিশেষও কারও কারও পাশে দাঁড়িয়েছে। যারা ফিরতে পারেনি স্থান হয়েছে একেবারে অচেনা জায়গার কোনো অস্থায়ী শিবিরে। লোগেশ, গঙ্গাস্মার মতো অনেক পরিযায়ী শ্রমিক পথশ্রমে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। সীমানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকে নিজের জেলার প্রান্তে এসে আটকে গেছেন। অনেকে নিজের গ্রামে ফিরতে পারলেও সেখানে নানান অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
    আমরা যখন ঘরে বসে থাকতে থাকতে একেঘেঁয়েমিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি, বাইরে বেরোনোর জন্য ছটফট করছি, কখনও সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেরিয়েও পড়ছি যত্রতত্র, তখন এইসব অসহায় মানুষেরা কেবল ঘরে ফেরার জন্য জীবনকে বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছে। বহু পরিবার কোলে কিংবা কাঁধে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের নিয়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়েছে সামান্য জল আর রুটি সম্বল করে। কারও সম্বল কিছু বিস্কুট। কারও বিগত কিছুদিন কেটেছে অনাহারে। আবার ফেরার চেষ্টা করেও ফিরতে পারেনি অনেকে। অসহায় ভাবে ছটফট করেছে। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেছে।
    প্রথম পর্যায়ের লকডাউনের শেষদিন আমরা দেখি মুম্বাইয়ের বান্দ্রার স্টেশনে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড়। তাদের কাছে এমন ভুল বার্তা ছড়িয়ে গিয়েছিল যে লকডাউন শেষ, এবার ট্রেন চলবে। বাড়ি ফিরতে মরীয়া শ্রমিকরা দূর দূর পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে ভিড় জমিয়েছিল স্টেশনে। এক জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছিল তাদের। খাওয়ার পাচ্ছিল না ঠিকঠাক। তাদের দাবি ছিল হয় খাওয়ার ব্যবস্থা হোক, নাহলে তাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হোক। শেষমেশ তাদের ভিড় হঠাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। এরকমই লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে তার কিছুদিন আগে। ১১ এপ্রিল দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল একদল পরিযায়ী শ্রমিক। তাদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ভয় পেয়ে অনেকে যমুনা নদীতে ঝাঁপ দেয়। তাতে মারা যায় এক শ্রমিক। শুরুর দিকে এই দিল্লির আনন্দবিহার বাস টার্মিনাসে বাড়ি ফেরার জন্য ভিড় করেছিল হাজার হাজার মানুষ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই সাহায্য সমস্ত শ্রমিকদের কপালে জোটার সুযোগ ছিল না। কেন, তার একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। দিল্লির শ্রমিকদের বিরাট অংশ নির্মান কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ শ্রমিকের নাম BOCW (Building And Other Construction Workers) Act অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই সরকার আনুদান দিলেও এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের তা পাওয়ার সুযোগ ছিল না। পূর্বেই বলেছি আমাদের দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বিরাট অংশ অসংগঠিত। তাছাড়া এটা স্বাভাবিক নিজের রাজ্যের মানুষদের জন্য রাজ্য সরকারের যে দায়বদ্ধতা বা দরদী অনুভূতি থাকে সেটা ভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে ততখানি থাকে না।
    যাই হোক, এইসকল পরিযায়ী শ্রমিকরা সরকারের দেওয়া রেশন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য, কমিউনিটি কিচেনের খাওয়ার প্রভৃতির মাধ্যমে কোনোরকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সাহায্য খুব কম। দিল্লিতে আটকে থাকা এক বাঙালী শ্রমিকের কথায়, অসুস্থতায় মারা যাওয়ার আগে আমরা অনাহারে মারা যাবো।’ অনাহার যে কতখানি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখলে বোঝা যায়। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে যে আচরণ করা হচ্ছে, তাও বেশ অমানবিক। উত্তরপ্রদেশে আমরা দেখেছিলাম পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর কীটনাশক স্প্রে করার মতো ঘটনা।
    লকডাউনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়েও আমরা দেখি বহু মানুষজনকে বাড়ির পথ ধরতে। ফেরার ছবি সেই এক। পথে নানান অসুবিধা এবং প্রতিকূলতার মধ্যে তাদের পড়তে হয়েছে। অনেকে প্রথম লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনোরকমে অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকায় এবং এই পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা না দেখায়, আর বাইরে অপেক্ষা করে থাকতে পারে না। এমনিতেই তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। তাই নানারকম বাধা সত্বেও তারা বাড়ির পথ ধরে। তা করতে গিয়ে কতজনই যে চরম দূর্দশার মধ্যে পড়ে তার ঠিক নেই। মৃ্ত্যুর ঘটনাও বাড়তে থাকে।
    বারো বছরের আদিবাসী কিশোরী জামালো মাদাকামি। বাড়ি ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায়। ঘরে চরম অভাব। মাত্র দুমাস আগে কিছু পরিচিত আত্মীয়ের সঙ্গে তেলেঙ্গানার ভূপালপল্লীতে গিয়েছিল খামারের কাজ করতে। দ্বিতীয় দফার লকডাউন চলাকালীন গত ১৬ এপ্রিল তারা তেরো জন হেঁটে বাড়ির পথ ধরে। কিন্তু জামালোর বাড়ি ফেরা হয়নি। দুদিন পর বাড়ি থেকে মাত্র এগারো কিলোমিটার দূরে মারা যায় সে। ক্লান্তি আর শরীরে জল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এই মৃত্যু।
    ক্লান্তিতে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত ৮ মে, মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে। কুড়িজন শ্রমিকের একটি দল ভুসাওয়ালা যাচ্ছিল। জালনা বলে একটি জায়গায় তারা কাজ করত। ফেরার কোনো উপায় না পেয়ে ১৭০ কিলোমিটার রাস্তা রেললাইন ধরে হেঁটে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তারা। একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ওই রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়ে। হয়তো ভেবেছিল ট্রেন চলাচল বন্ধ কিংবা এমনও ভেবেছিল একটু বিশ্রাম নিয়ে উঠে পড়বে। কিন্তু ক্লান্তি এতটাই তাদের জড়িয়ে ধরেছিল যে ঘুমিয়ে পড়ে তারা। মেল ট্রেন আসার শব্দ কিংবা বাঁশি কোনোটাই তাদের বেশিরভাগের ঘুম ভাঙাতে পারেনি। যে চারজনের ঘুম ভেঙেছিল তারা চেষ্টা করেছিল বাকিদের জাগানোর। কিন্তু তাদের চোখে তখন গভীর আরামের ঘুম। রেলের চাকা ছিন্নভিন্ন করে দেয় ষোলোটি হতভাগ্যের শরীর। সংবাদমাধ্যমে দূর্ঘটনার যে ছবি তুলে ধরা হয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছিল কয়েকটা পোড়া রুটি পড়ে আছে দূর্ঘটনার স্থলে যা সম্বল করে পথে নেমেছিল তারা। স্বপ্ন দেখেছিল বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার।
    হায়দ্রাবাদ থেকে আমভর্তি ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিল ১৫ জন শ্রমিক। পথে ট্রাক উল্টে মারা যায় ৫ জন। দিল্লি থেকে এক হাজার কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে বিহারের পূর্ব চম্পারণে নিজেদের বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখেছিল সাতজন পরিযায়ী শ্রমিক। তাদের মধ্যে ছিল ছাব্বিশ বছরের সাগির আনসারি। লখনউয়ে রাস্তার পাশে বসে যখন খাওয়ার খাওয়ার সময় গাড়ির ধাক্কায় মারা যায় সে। পশ্চিমবঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করত ৩৫ বছরের ফুলদেব ভূঞ্যা। গত ৬ মে দুই বন্ধুর সঙ্গে সাইকেলে ঝাড়খণ্ডের ছাতরা জেলায় নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দূর্গাপুরের কাছাকাছি এক গ্রামে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়। গ্রামবাসীদের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায় ফুলদেব। মালদার এক শ্রমিক কমলেশ এস প্রামাণিক আমেদাবাদে কাজ করতে গিয়েছিল। স্বামী-স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে ঘাটলোদিয়া আর সি টেকনিক্যাল কলেজের কোয়ারেনটাইন সেন্টারে আশ্রয় হয়েছিল তার। সেখানে সে আত্মহত্যা করে। মুর্শিদাবাদের শ্রমিক আশিক ইকবাল মণ্ডল কেরলে কাজে গিয়ে আটকে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ট্রেনে করে মুর্শিদাবাদের একঝাঁক শ্রমিক বাড়ি ফিরতে পারলেও আর্থিক সমস্যায় ফিরতে পারে না আশিক। মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করে। এইভাবে ক্লান্তি, অনাহার, দূর্ঘটনা, মানসিক চাপ প্রভৃতির কারণে এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিনশরও বেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। কে জানে, হয়তো আরও অনেকের জীবন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে!
    যত দিন গড়াচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের দূর্দশার চিত্রটা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে ছোটো ছোটো আস্তানায় একসঙ্গে অনেকে গাদাগাদি করে আছেন। সোশাল ডিসটেন্সিং ব্যাপারটা তাদের কাছে বিলাসিতা। অনেকের ঠিকমতো খাওয়ার জুটছে না। একমুঠো খাওয়ারের জন্য তারা হাহাকার করছে, কান্নাকাটি করছে। একমুঠো খাওয়ারের জন্য তাদের এই হাহাকার, কান্না আর অসহায় আর্তনাদ...চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমাদের গরিব ভারতবর্ষের ছবি।
    তৃতীয় দফর লকডাউন চলাকালীনও দেখা যায় পরিযায়ীদের পদযাত্রা। সেই একই চেনা ছবি, একই দৃশ্য। তারই মাঝে কিছু কিছু ছবি হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। শুরুতে সেই ছোট্ট শিশুটির দৌড়ের কথা বলেছি। তার মতো কতো শিশু রাস্তায় হেঁটেছে তার ইয়ত্তা নেই। বাবামায়ের সঙ্গে লড়াই করছে সেইসব দুধের শিশুরাও। একমুঠো খাওয়ার, একটু ভালো থাকার অধিকার ওদেরও আছে। কিন্তু নিষ্ঠুর সময় সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের। ওদের একমাত্র ভরসা ওদের বাবা-মা। সেই সব বাবামায়েরা শুধু নিজেদের জীবন নয়, সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে সমস্ত প্রতিকূলতা সহ্য করে রাস্তায় নেমেছে অদম্য মনোবল নিয়ে। তাই তো দয়ারামের মতো এক সাধারণ মানুষ পাঁচ বছরের সন্তানকে কাঁধে নিয়ে পাঁচশো কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে দিল্লি থেকে ফেরে মধ্যপ্রদেশে নিজের ঘরে। এমনি কত দয়ারাম তাদের সন্তানের কাছে অজান্তেই হয়ে থাকবে জীবনযুদ্ধের নায়ক। কিন্তু তাদের কথা আমরা জানতেই পারব না।
    সোনারপুরে বাসিন্দা বুবাই রায় তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে আকাশকে নিয়ে ফারাক্কা থেকে রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করে। খাওয়ার ফুরিয়েছে অনেক আগে। জলটাও শেষ। ছেলে পিপাসায় কাতর। ছেলের জন্য একটু জল চাইতে গ্রামে গেলে বুবাইকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় গ্রামের লোকেরা। বুকে পিপাসা নিয়েই হাঁটতে শুরু করে তারা। রাস্তায় পুলিশ আটকায়। সেখানেও জোটে মারধর। তারপর আবার হাঁটা। আবারও এক পুলিশ স্টেশন। তবে ভাগ্য ভালো এখানে পুলিসের তরফে কয়েক কেজি চিড়ে দেওয়া হয়। তাই নিয়ে আবারও হাঁটা। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারেনি সে। ক্লান্ত হয়ে সাগরদিঘি গ্রামের ট্রেনলাইনের ধারে একটা স্কুল ঘরে আশ্রয় নেয়। মারধরের অভিজ্ঞতা আগেই হয়েছে। সেখান থেকে বেরোনোর সাহস হয়নি। টানা দু-সপ্তাহ সেখানে লুকিয়ে থাকার পর গ্রামের কিছু যুবকের নজর পড়ে। ভাগ্য ভালো, তারা তাদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করে।
    আর একটি ছবি একটি ছোটোখাটো রুগ্ন মহিলার। বয়স খুব বেশি নয়। পায়ে হেঁটে সঙ্গীদের সাথে বাড়ির পথ ধরেছে সেও। দুই কাঁধে দুই সন্তান। সন্তানকে কাঁধে করে হাঁটছে জননী, ক্লান্তিহীন। কষ্ট কি হচ্ছে না তার? অবশ্যই হচ্ছে। তবুও সারামুখে অদ্ভুত এক নির্মল হাসি জড়িয়ে। একটু একটু করে গন্তব্যের কাছে আসার সুখ ছড়িয়ে গোটা মুখে। চরম দারিদ্র্য, কষ্ট, যন্ত্রণাও তার মুখের হাসির ঐশ্বর্যটুকু কেড়ে নতে পারেনি। এই বলিষ্ঠ মায়ের পাশাপাশি আর এক মায়ের কথাও বলতে হয়। ৩২ বছরের নিকিতা সাত মাসের অন্তসত্বা। নবি মুম্বাইয়ের ঘানাশোল থেকে মহারাষ্ট্রের বুলধানা গ্রাম---পথটা অনেক। এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পায়ে হেঁটে পথে নেমেছে নিকিতা। জানি না নিকিতা শেষপর্যন্ত তার বাড়ি পৌঁছোতে পারবে কিনা। নিজের ঘরে সন্তানের জন্ম দেওয়ার বাসনায় পায়ে হেঁটে পথচলা এই বলিষ্ঠ নারী দেখিয়ে দিয়েছেন দূর্দশার নগ্ন ছবিটা।
    এরকম কত যে দূর্দশার ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে চলেছে তার আমরা খোঁজ পাই না। নানা বাধা অতিক্রম করে যারা ফিরতে পারছেন তারাও কি শেষমেষ বাড়িতে পৌঁছোতে পারছেন? অনেককেই জেলার সীমান্তে আটকে দিচ্ছে পুলিশ। কেননা লকডাউনের কারণে তাদের ঢোকানোর কোনো নির্দেশ নেই তাদের কাছে। প্রশাসনিক ঝামেলা পেরিয়ে যদিও বা ঢোকার অনুমতি মেলে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে অনেককে নানান হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনেকে পুলিশের আটকে দেওয়ার ভয়ে মেঠোপথ বা অলিগলি দিয়ে গ্রামে ঢুকে যাচ্ছে। ফলে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে না। তাতে করে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। গ্রামে ফিরলেও আর একপ্রস্থ ঝামেলা। অনেক জায়গায় তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন গ্রামের মানুষ। এমনকি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফিরলেও। গ্রামের মানুষের কাছে তারা যেন এখন অস্পৃশ্য। স্বাস্থ্য দপ্তর বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিলেও দেখা যাচ্ছে অনেকের নিজের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। স্থান হচ্ছে ক্লাবঘর কিংবা স্কুল ঘরে। দীর্ঘ ক্লান্তিকর লড়াই করে ফিরেও দেখা যাচ্ছে সহসা বাড়ির সুখ থেকে বঞ্চিত অনেকেই।
    দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন চলাকালীন এই বিষয়ে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটি ছেলে গ্রামে ফিরে আসছে জেনে গ্রামের মানুষেরা তাকে আসতে না বলে। তা সত্ত্বেও সে যখন ফেরার চেষ্টা করে, তখন গ্রামের কিছু মানুষের বক্তব্য ছিল ফিরলে তাকে তাড়াবে গ্রাম থেকে। অন্য একটি গ্রামের কথা। একটি পরিবারের ছেলে বাইরে ছিল। তারা চায় তাদের সে বাড়ি ফিরে আসুক। ছেলেটিও চায়। কিন্তু গ্রামে গ্রামে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা দেখে বাড়ির লোকেরা বুকে পাথর চেপে তাকে ফিরতে না বলে দেয়। এটা ঠিক, এগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কিন্তু এসব প্রমাণ করে করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্যের ভাইরাস কি গ্রাস করছে না আমাদের?
    এভাবেই ভারতবর্ষের কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন আজ চরম দূর্দশায়। কাজ নেই, খাওয়ার নেই, মাথার ওপর ছাদ নেই। বাঁচানোর জন্য প্রতিটি মুহুর্তে লড়াই করছে তারা। তবে বিভিন্ন রাজ্য সরকার এখন তাদের নিজেদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা হয়তো এবার নিজেদের বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু আগামী সময়েও তাদের জীবনে এক চরম দূর্দশা অপেক্ষা করে আছে। লকডাউনের কারণে কাজকর্ম বন্ধ। গরিবি ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। লকডাউন একদিন উঠে যাবে। কিন্তু সমস্ত কাজকর্ম কি আগের মতো শুরু হবে? নিশ্চয়ই নয়। এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই কাজ হারাবেন। কোথাও কাজ শুরু হলেও এরা কি আবারও ফিরে যেতে পারবেন? এই ভাইরাসের তাণ্ডব কতদিন চলবে জানা নেই। তবে যা ইঙ্গিত এখনো একটা দীর্ঘসময় এই ভাইরাস আমাদের ভোগাবে। তাহলে এইসব মানুষগুলো যারা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিত রুটি রোজগারের জন্য কী করে তারা নিজেদের সংসার চালাবেন? এই কোটি কোটি শ্রমিক এবং তাদের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা আরও কয়েক কোটি মানুষ, তাদের জীবনে ভয়ংকর সংকট নেমে আসতে চলেছে। এককথায়, পরিযায়ী শ্রমিকরা ভালো নেই এখন। এই অন্ধকার কাটিয়ে তাদের জীবনে ভালো সময় আসতে কত সময় লাগবে তা একমাত্র সময়ই বলতে পারে।

১২ মে, ২০২০। 

নির্বাসনের রোজনামচা-১৬                                                              নির্বাসনের রোজনামচা-১৮