Friday, April 3, 2020

নির্বাসনের রোজনামচা-১



আছি নির্বাসনে এই অদ্ভুত সময়ে

এ-এক বড়ো অদ্ভুত সময়। একেবারেই অচেনা। বর্তমান প্রজন্মের সমস্ত মানুষ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির স্বাক্ষী এখন। এরকমটা কোনোদিন হতে পারে ভাবতে পারেনি বোধহয় কেউ। অতি ক্ষুদ্র কিন্ত ভয়ংকর এক ভাইরাসের দাপটে থমকে গেছে প্রায় গোটা পৃথিবী। ঘরবন্দী জীবন। এতো একপ্রকার নির্বাসন। বাইরের জগত থেকে নির্বাসন। জীবনের চেনাজানা স্বাভাবিক ছন্দ থেকে নির্বাসন। প্রকৃতি এখন বাইরের দরজা বন্ধ করে আমাদের ঘরের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাইরে বেরোনোর উপায় নেই। বাইরের উন্মুক্ত প্রকৃতি আর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ থেকে নির্বাসিত হয়ে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকা সত্যিই বেশ কষ্টকর। জেট যুগের বাসিন্দা আমরা। জীবন গতি চায়। হঠাৎ করে গতি হারানো এই গৃহবন্দী জীবন মাঝে মাঝে যেন বোঝা হয়ে ওঠে। কেননা এমন জীবনের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত নই। জীবনে এরকম পরিস্থিতি আসলে কীভাবে লড়াই করতে হয় তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু সময় তো কাটাতে হবে। এছাড়া আমাদের মতো সাধারণ মানুষের আর কোনো উপায় নেই। তাই যে যেমন করে পারছে চেষ্টা করছে সময় কাটানোর। চেষ্ট করছি আমিও। কিন্তু বই পড়া, লেখালিখি, টিভি দেখা... কোনোকিছুতেই ঠিকমতো মন বসছে না। একঘেঁয়েমি কাটাতে তাই আবারও সেই কলম হাতে বসা।

ঘরবন্দী হলেও বাইরের জগৎ থেকে পুরো বিচ্ছিন্ন নয় জীবন। দূরদর্শন আর খবরের কাগজ তো আছেই। সেই সঙ্গে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বাইরের জগতের অসংখ্য খবর প্রতিমুহূর্তে নজরে আসছে। সেসব দেখতে দেখতে মনের মধ্যে জেগে ওঠা ব্যক্তিগত কিছু অনুভব লিখে যাই কাগজের পাতায়। 
একদিন ঝড় থেমে যাবে। সুস্থির হবে জীবন। ফিরে আসবে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। মনের মধ্যে থেকে একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে এইসব ভয়ংকর দিনগুলি। কালো কালো অক্ষরের টুকরো টুকরো ছবিগুলো দেখতে দেখতে সেদিন নিজেকেই জাগিয়ে রাখব এই বলে, প্রকৃতি তোমার থেকে শক্তিশালী আর কেউ নয়। আমরা তো তুচ্ছ মাত্র। আর নতশির হয়ে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবো জীবনের জয়যাত্রার।

সংকটের অন্ধকারে ঢেকে গেছে সভ্যতার পথচলা। পৃথিবীর আজ ঘোর বিপর্যয়। তবে এই বিপর্যয় মোকাবিলা করে আমরা জিতব একদিন, জিতবই। প্রকৃতিই আমাদের জিতিয়ে দেবে। কেননা প্রকৃতিও চায় না তার সন্তানের চরম পরাজয়। এখন কেবল ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা। বাইরে ঈশ্বর জেগে আছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। তারাও বারবার বলছেন আমরা যেন ঘরে থাকি। আমরা যত বেশি করে ঘরে থাকব তাদের কাজ তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি সহজ হবে। তাই আমাদের এখন কেবল ঘরে থাকার সময়।

No comments:

Post a Comment