মূর্তি প্রতিষ্ঠা
সৌরভকুমার
ভূঞ্যা
গল্প
করতে করতে পথ হাঁটছিল আরিফ আর আখতার। রাত প্রায়
দুটো। চারদিকে শুনশান। একফালি চাঁদের আলোয় প্রকৃতিতে ঘোলাটে অন্ধকার। পাশের
একটা গ্রামে জলসা শুনতে গিয়েছিল তারা। শেষ হতে বেশ দেরি হয়ে যায়।
গ্রামের প্রায় সীমানার কাছাকাছি দুজনে। সহসা
আরিফ চমকে ওঠে। সামনে বেশ কিছুটা দূরে একটা ঝোপের মতো। হালকা আলোয় মনে হয় সেই ঝোপের
আড়ালে কেউ যেন বসে পড়ল। প্রথমটা ভাবে মনের ভুল। কিন্তু আখতার জানায় সেও দেখেছে।
দুজনে একসঙ্গে ভুল দেখতে পারে না। তাদের স্থির বিশ্বাস কেউ লুকিয়ে রয়েছে ঝোপের
আড়ালে।
আরিফ আর আখতার দুজনেই খুব সাহসী। কাছেপিঠে
খোঁজাখুঁজি করে একটা গাছের মোটা ডাল পায় আরিফ। আখতার টর্চ দেখিয়ে সামনে সামনে
এগোয়। আরিফ লাঠি হাতে পেছনে থাকে। কাছাকাছি হতে বুঝতে পারে তাদের সন্দেহ মিথ্যে
নয়। কেউ না কেউ রয়েছে ঝোপের আড়ালে।
‘কে ওখানে?’ বলে ঝোপের ওপর
টর্চের আলো ফেলে আখতার। সঙ্গে সঙ্গে একজন নয়, দুজন ঝোপ থেকে বেরিয়ে ছুটতে শুরু
করে। এরা যে চোর বুঝতে বাকি থাকে না আরিফদের। তারাও তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করে।
বেশ কিছুটা ধাওয়া করেও তাদের নাগাল পায় না তারা। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে তারা
পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আরিফরা পিছু ফেরা পথ ধরে।
ঝোপের কাছে আসতেই, টর্চের আলোয় একটা জিনিস
দেখে দুজনে চমকে ওঠে। দেখে বড়ো একটা পেতলের কালী মূর্তি। মূর্তিটাকে চিনতে পারে
তারা। তাদের গ্রামের মন্দিরের মূর্তি। কয়েকমাস আগে গ্রামবাসীরা চাঁদা দিয়ে মূর্তিটি
বানিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই গ্রামে আরিফরা চার-পাঁচ ঘর মুসলিম পরিবার।
গ্রামের অধিবাসী হওয়ায় তারাও চাঁদা দিতে চেয়েছিল কিন্তু গ্রামের লোকেরা নেয়নি।
কিছুক্ষণ মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে আরিফ আর আখতার।
মুহূর্তক্ষণ ভেবেই পরবর্তী করণীয় কি তা স্থির করে ফেলে। মূর্তিটা বেশ ভারী। আরিফ
মূর্তিটাকে কাঁধে তুলে নেয়। সামনে টর্চ হাতে আখতার, পেছনে মা-কালীর মূর্তি কাঁধে
আরিফ। মন্দিরের দিকে এগিয়ে চলেছে দুজনে।
No comments:
Post a Comment