পথ হারিয়েছে
ঠিকানা...

হাঁটছে
গঙ্গাস্মাও। ২৯ বছরের তরুনী গঙ্গাস্মা। কর্ণাটকের রায়চুর গ্রামে তার বাড়ি। কাজ করে
বেঙ্গালুরুতে। লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কাজ। মালিক ছাঁটাই করে দিয়েছে। কাজ
নেই, সঞ্চিত অর্থ নেই। এদিকে যা ইঙ্গিত তাতে লকডাউন আরও বাড়বে। এখানে বসে থাকলে না
খেয়ে মরতে হবে। তাই বাড়ির পথ ধরেছে সেও। রাস্তাটা কম নয়। ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
যে কারুরই পক্ষে এত রাস্তা হাঁটা সহজ কাজ নয়। গঙ্গাস্মার পক্ষে তো কাজটা বেশ কঠিন।
কিন্তু সময় অশান্ত। জীবন কঠিন হয়ে গেছে। বাঁচতে গেলে সেই কাঠিন্যকে জয় করতে হবে,
প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। তাই পা কে ভরসা করে
গঙ্গাস্মাও হাঁটছে। তার চোখেও এখন বাড়ির স্বপ্ন আঁকা।
মারণ
ভাইরাসের আক্রমণে তছনচ হয়ে গেছে সবকিছু। এলোমেলো হয়ে গেছে জীবনের অনেক হিসেব। জীবন
বাঁচাতে ঘরের মধ্যে নিজেকে বন্দী করেছে মানুষ। কিন্তু সেই ঘরের সুখ সকলের কপালে
জোটেনি। হাজার হাজার মানুষের কাছে নিজের ঘরই যেন আজ একটা স্বপ্নের মতো। সেই
স্বপ্নকে ছোঁওয়ার জন্য এরকমই অসংখ্য লোগেশ, গঙ্গাস্মারা আজ পথে নেমেছে। মনে স্থির
বিশ্বাস হঠাৎ অচেনা হয়ে যাওয়া এই পথ তাদের ঠিকই পৌঁছে দেবে স্বপ্নের ঠিকানায়।
লকডাউনের
মাঝেও পথ-জীবনের সেই ছবি বারে বারে উঠে আসে। ১৪ এপ্রিল ২০২০, বংলা নববর্ষ। নতুন
বছর মানে একরাশ আবেগ, উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা। কিন্তু এবার তার ছিটেফোঁটাও ছিল না।
করোনা-বিদ্ধ সময়ে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে সমস্ত উৎসব। তবুও এই দিনটা নিয়ে মানুষের
মনে একটা উৎসাহ ছিল। এদিন প্রথম দফার লকডাউনের সমাপ্তি আর এইদিন বেলা এগারোটায়
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। লকডাউন যে এখনি শেষ হচ্ছে না
তার একটা আগাম ইঙ্গিত ছিলই। তবুও মানুষের মনে একটা কৌতূহল ছিল পুরোপুরি লকডাউন
থাকবে নাকি কিছু ছাড় থাকবে? যানবাহন কি কিছু চলবে? কিছুদিন ধরে বাতাসে একটা খবর
ঘোরাফেরা করছিল কিছু ট্রেন চলতে পারে। চলবে কি? না, সেসব কিছু হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী ৩ মে পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেন।
এদিন টিভির
পর্দায় দুটো ছবি দেখে মানুষ চমকে ওঠে। দেখা যায় মুম্বইয়ের বান্দ্রা স্টেশনে কয়েক
হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড়। উদ্দেশ্য ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরবে। কোনোভাবে তাদের
মধ্যে ট্রেন চলার একটা ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল। স্টেশনে বসে বিক্ষোভ দেখায় তারা।
অনেক বুঝিয়েও যখন কাজ হয় না, তখন পুলিশ তাদের ওপর লাঠি চার্জ করে হটিয়ে দেয়।
গুজরাতের সুরতেও একটি বাস স্ট্যান্ডে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেয় অসংখ্য শ্রমিক। যদিও
শেষমেষ কেউই বাড়ি ফিরতে পারে না।
ঠিক এমন
দৃশ্য দেখা গিয়েছিল প্রথম দফার লকডাউন ঘোষণার শুরুর দিকে। সেবারও গুজরাতের সুরতে
ভিড় জমিয়েছিল ভিন রাজ্যের শ্রমিকরা। সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য দেখা গিয়েছিল দিল্লির
আনন্দ-বিহার বাস টার্মিনালে। প্রথম দফা হোক কিংবা দ্বিতীয় দফা, এইসব ভিড় করা
মানুষদের আসলে একটাই উদ্দেশ্য, বাড়ি ফেরা। সংক্রমণের ভয় আছে জেনেও, লকডাউনের বিধি
নিষেধ উপেক্ষা করে, করোনার স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মুখে সামান্য মাস্ক,
রুমাল কিংবা গামছা চাপা দিয়ে বাসস্টান্ড কিংবা স্টেশনে ভিড় জমিয়েছিল।
ভিন
রাজ্যের শ্রমিক এরা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি জায়গায় এদের বাড়ি। লকডাউনের
কারণে এরা বাইরে আটকে পড়েছেন। রুজি রোজগার বন্ধ, হাতের সঞ্চয় ফুরিয়ে গেছে।
প্রতিটি রাজ্য সরকার আটকে পড়া শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তবে কিছু
ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হচ্ছে। নাহলে তারা খাওয়ার না পাওয়ার অভিযোগ জানাবেন কেন? আশ্বাস,
ব্যবস্থা, অভিযোগ, এসব সরিয়ে রেখে একটু অন্যভাবে দেখা যাক ব্যাপারটা। কী চায় এই
সব মানুষগুলো? এরা বাড়ি ফিরতে চায়। এটাই হল আসল সত্যি।
বাড়ি
আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। যেখানে আছে প্রিয়জনের স্নেহমাখা পরশ, ভালোবাসা আর
নিরাপত্তার আশ্বাস। রোজকার দিন শেষে পাখিরাও ক্লান্ত ডানায় বিকেলের নরম রোদ্দুর
মাখতে মাখতে ফিরে আসে তাদের ছোট্ট নীড়ে। বাড়িতেই রয়েছে অপার শান্তি। এই ঘোর
সংকটের সময়ে সেই বাড়ি মানুষের কাছে আরও প্রিয় হয়ে ওঠে। সেখানে থাকা মানুষগুলোর
বিষণ্ণ, উদ্বিগ্ন মুখগুলো তাকে ভেতরে ভেতরে আরও বেশি করে দুর্বল করে দেয়। মনের
মধ্যে একটা দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি হয় বাড়ি ফেরার। ওই সব খেটেখাওয়া, একপ্রকার অসহায়
মানুষগুলোও তাই জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায় এসে ভিড় করে। তারা জানে ভয়ংকর বিপদ
তাদের জন্য ওত পেতে আছে। তবুও প্রিয়জনের কাছে আসার শান্তিটুকুর লোভে জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে পথে নামে তারা। ফিরতে চায় বাড়ি।
করোনার
বিপর্যয়ে তছনচ হয়ে গেছে সবকিছু। লকডাউনের কারণে বহু মানুষ আটকে পড়েছে বিভিন্ন
জায়গায়। সবথেকে সমস্যায় পড়েছে গরিব, শ্রমিক মানুষগুলো। তাদের মধ্যে ভাগ্যবান কেউ
কেউ হয়তো বাড়ি ফিরতে পেরেছে। অনেকেই পারেনি। অনেকের আস্তানা হয়েছে অচেনা জায়গায়
কোনো অস্থায়ী অচেনা ক্যাম্পে। আবার কেউ কেউ মরীয়া হয়ে পায়ের ভরসায় রাস্তায়
নেমেছে, গন্তব্য দূর জেনেও। লোগেশ সুব্রমানিয়াম কিংবা গঙ্গাস্মাদের মতো।
প্রথম দফার
লকডাউন ঘোষণার পর-পরই এরকম কিছু ছবি আমরা দেখতে পাই নিউজ পেপার, দূরদর্শন কিংবা
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। দেখা যায়নি এমন সংখ্যাটা আরও অনেক অনেক বেশি। দু-একটি
চিত্র এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। রাস্তার কাজ করত কিছু শ্রমিক। লকডাউনে কাজ বন্ধ।
রোজগার বন্ধ। বাইরে খাবে কি? এদিকে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। তাই দেখা যায়
বেশ কয়েকটি পরিবার পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ। সঙ্গে মহিলা, ছেলেমেয়ে। কারও
কারও কাঁধে ছোটো ছোটো বাচ্চা।
মহারাষ্ট্র
থেকে বাংলায় কাজ করতে এসেছিল কয়েজন শ্রমিক। লকডাউনে কাজ বন্ধ। এদিকে বাড়ি ফেরার
পথও বন্ধ। রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। অগত্যা কোন্নগর থেকে হাওড়া হয়ে হাঁটাপথেই
তারা মহারাষ্ট্রের পথ ধরে। তবে ভাগ্য কিছুটা ভালো ছিল এই তিনটি শ্রমিক পরিবারের।
খড়গপুর পৌঁছোনোর পর পুলিশ ব্যাপারটা জানতে পারে। নাসিক থেকে পেঁয়াজ লরি আসে
খড়গপুরে। মাল খালাস করে ফিরে যাওয়া তেমনি একটি ফিরতি লরিতে তিনটি পরিবারকে তুলে
দেয় পুলিশ।
ভুবনেশ্বর
থেকে সাইকেলে করে পশ্চিমবাংলায় ফিরছিল একত্রিশ জন শ্রমিক। বিগত দশদিনে তাদের মাত্র
চারদিন খাওয়ার জুটেছিল। প্রায় নিঃস্ব পকেট, জলের বোতল আর হয়তো একটা বিস্কুটের
প্যাকেট---এই সম্বল করে ভাগ্যের হাতে নিজেদের সঁপে দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে তারা।
রাজস্থান
থেকে হেঁটে বিহারে নিজের বাড়ি ফিরছিল এক শ্রমিক। দীর্ঘ্য রাস্তা। শরীরেরও সহ্যের
একটা সীমা আছে। উত্তর প্রদেশের আমরোহায় এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অজ্ঞান হয়ে
তিনি লুটিয়ে পড়েন একটি বাড়ির সামনে। বাড়ির মালিক ভারতীয় দলের বিশিষ্ট পেস বোলার
মহম্মদ শামি। বাড়ির সিসি টিভি ফুটেজে ব্যাপারটা দেখতে পেয়ে তিনি সেই শ্রমিকের
প্রাথমিক পরিচর্যা করেন। খাদ্য সামগ্রী দেন। আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন।
আমাদের
রাজ্যের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় হেঁটে যাওয়ার তো আসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। অনেকে
শেষমেষ বাড়ি ফিরতে পেরেছেন, পারেননি অনেকেই। রেলের ঊনিশ জন ঠিকা শ্রমিক হাওড়া থেকে
বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কিন্তু ততদিনে সমস্ত জেলা সিল হয়ে গেছে। রায়গঞ্জ
থানার পুলিশ তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। অনুরূপ সমস্যায় পড়েন হাওড়া থেকে বহরমপুর
যাওয়া চারজন শ্রমিক। তাদের উদ্ধার করে কালনায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এইভাবে জেলা থেকে জেলা, রাজ্য থেকে রাজ্য দেখা
গেছে পরিযায়ী মানুষের ভিড়।
এই যাত্রা
মোটেও সুখকর নয়। কিন্তু রোজগারহীন মানুষগুলো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে মরীয়া
হয়ে বাড়ির পথ ধরেছে। কেউ ফিরতে পেরেছে,
অনেকেই ফিরতে পারেনি। কোথাও পুলিস তাদের উদ্ধার করে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কোথাও
কোনো সহৃদয় ব্যক্তি কিংবা কোনো সংগঠন তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
কোথাও স্বস্ব রাজ্য প্রশাসন, জেলা প্রশাসন আটকে পড়া শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার
ব্যবস্থা করেছেন। সামান্য স্বস্তি হয়তো পেয়েছেন মানুষগুলো কিন্তু সমস্যা মুক্তি
ঘটেনি পুরোপুরি। খাওয়ার অভাবের অভিযোগের কথা তাহলে বারে বারে ফুটে ওঠত না ওইসব
অসহায় মানুষগুলোর গলায়।
করোনার
সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে আমাদের দেশে। ব্যাপারটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। গোষ্ঠী
সংক্রমণ শুরু হলে এবং তা ব্যাপক আকার ধারন করলে অবস্থা কী ভয়াবহ হবে সেটা জানতে কারও
প্রায় বাকি নেই। যেসব মানুষরা পথে নেমেছেন, যারা বাস স্ট্যান্ড কিংবা স্টেশনে ভিড়
করেছেন তারাও কি জানে না এসব কথা? এতদিনে তাদের সবকিছু জানা হয়ে গেছে। তবুও ঝুঁকি
নিয়ে তারা পথে নেমেছেন। আসলে ক্ষুধা নামক ভাইরাস করোণার মতো না হলেও বেশ
মারাত্মক। তার আক্রমণ সহ্য করারও একটা সীমা আছে। অনকের মধ্যে তাই এমন মনোভাব ফুটে
উঠেছে, না খেতে পেয়ে মরার চেয়ে করোনায় মরব, তবু ভালো। অন্তত যদি বাড়িটুকু যাওয়া
যায়।
হ্যাঁ,
শেষমেষ সেই বাড়ি। করোনা নিয়ে তাদের যে কোনো অসচেতনতা, অবহেলা বা বেপোরোয়া
মনোভাবকে সমর্থন করা যায় না। কেননা এটা এমন রোগ যা কেবল নিজেকেই ভোগায় না,
জ্যামিতিক হারে আরও অনেক অনেক মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। যেটা কখনওই মেনে
নেওয়া যায় না। কিন্তু ওই যে বললাম বাড়ি---সবাই চায় বাড়ি ফিরতে। ঘরের প্রিয়জনের
কাছে ফিরতে। আতঙ্কমাখা এই অশান্ত, অস্থির সময়ে চারপাশে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে অদৃশ্য
মৃত্যুদূত, তখন ঘরে থাকা প্রিয় মানুষদের মুখগুলো বারে বারে ভেসে ওঠে মনের মধ্যে,
হৃদয়কে বিদীর্ণ করে। ইচ্ছে করে তাদের কাছে যেতে, তাদের পাশে বসতে, একসাথে বসে
সুখ-দুঃখের গল্প করতে, স্নেহ-ভালোবাসার স্পর্শ মাখতে। এই পৃথিবীতে ঘরই আমাদের
স্বর্গ। সবাই চায় শেষমেষ ঘরে পৌঁছোতে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ
পথে নামে। কেউ বাস স্ট্যান্ড, স্টেশনে ভিড় করে, কেউ সাইকেল নিয়ে বেরোয়; কেউ মাছের
ড্রামে লুকিয়ে ফেরে, আবার কেউ কেউ সামান্য জল-বিস্কুট সম্বল করে এক জেলা থেকে অন্য
জেলা শুধু নয়, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য, দীর্ঘ কয়েকশো কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে
ফেরার দুঃসাহস দেখায়। যেমনটা দেখিয়েছিল লোগেস কিংবা গঙ্গাস্মা।
নাগপুর
থেকে তামিলনাড়ু, লোগেশ হাঁটতে থাকে। একা নয়। আরও কয়েকজনের সাথে। কিন্তু সেই হাঁটা
তার শেষ হয় না। সেকেন্দ্রাবাদের কাছে এসে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভাইরাস তাকে কাবু
করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু করোনার ত্রাসই লেখে তার জীবনের শেষ কথা। সেকেন্দ্রাবাদেই
শেষ হয় যায় লোগেশের পথচলা। বাড়ি ফিরতে পারেনি লোগেশ। দোষটা লোগেশের নয়। আসলে
পথই লোগেশের বাড়ির ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছিল। একইভাবে গঙ্গাস্মার বাড়ির ঠিকানাও
হারিয়ে ফেলেছিল পথ। বেঙ্গালুরু থেকে কর্ণাটক। দীর্ঘ রাস্তা। একে পথশ্রম, তার ওপর
আনাহার, বিধ্বস্ত শরীর। কিন্তু বাড়ি ফেরার তীব্র বাসনায়, স্বামী-সন্তানের কাছে
ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষায় পথ হাঁটতে থাকে সে। বেল্লারিতে তাদের পথ আটকায় পুলিশ।
সেখানকার একটি ক্যাম্পে স্থান হয়। সেখানেই মারা যায় গঙ্গাস্মা। মৃত্যুর কারণ নিয়ে
যে বিতর্কই থাক, এটাই আসল সত্যি গঙ্গাস্মা বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল কিন্তু ফিরতে পারেনি
শেষমেষ। অচেনা পথেই হারিয়ে গেছে তার জীবনের অন্তিম ইচ্ছেটুকু।
এইভাবে আরও
কত লোগেশ, গঙ্গাস্মা হারিয়ে গেছে পথের বুকে। আমরা জানতেই পারিনি। আগামী সময়ে আরও
কত মানুষ হারিয়ে ফেলবে পথ। বাড়ির গন্তব্য অনেকেরই হয়তো অধরাই রয়ে যাবে। কিন্তু
এমনটা যেন না হয়। রুটি রুজির তাড়নায় ঝাঁকে ঝাঁকে শ্রমিকেরা দূর দূর পথ পাড়ি দিয়ে
হাজির হয়েছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে। সেই পথ এখন
সম্পূর্ণ অচেনা। গতিরুদ্ধ হয়ে গেছে তার। একটা অস্থির, সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে চলছি
আমরা। আগামী সময়টাও বেশ কঠিন। তবুও আশা করব এই পথ হয়তো একদিন ফিরে পাবে তার চেনা
রূপ। বুকে কের নিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ঠিকানা নিশ্চয়ই সে হারিয়ে ফেলবে না। যারা
ফিরতে পারেনি, যারা ফিরতে চায়, একদিন না একদিন এই পথ ঠিকই তাদের পৌঁছে দেবে যে যার
ভালোবাসার ঠিকানায়।
১৬ এপ্রিল, ২০২০।
No comments:
Post a Comment