Friday, April 17, 2020

অণুগল্প


সমাজসেবী
সৌরভকুমার ভূঞ্যা

বরাবরই ব্যতিক্রমী ভবনায় বিশ্বাসী প্রগতি সংঘের সভাপতি অরিন্দম। গতানুগতিকতার বাইরে কাজ করার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বেশ নাম কুড়িয়েছেন। সেই ধারা মেনে বাংলা নববর্ষের দিন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন। সবাই যখন গান-বাজনা নিয়ে ব্যস্ত তিনি দিনটা পালন করলেন বাজার সংলগ্ন এলাকা সাফাই অভিযানের মাধ্যমে।
     ভীড়টা মন্দ হয়নি। ক্লাবের সদস্য-সদস্যা ছাড়াও উপস্থিত এলাকার এক নেতা, একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও একজন নামী সাহিত্যিক।
     পাঁজি দেখে শুভ মুহুর্তে অনুষ্ঠান শুরু। একটি বিশাল ঝাড়ু। অরিন্দম, সেই নেতা, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক একসঙ্গে ঝাড়ু ধরেন। একঝাঁক সাংবাদিক উপস্থিত। পটাপট ছবি উঠতে থাকে। ক্যামেরাম্যানের দাবি মেনে অরিন্দমরা বেশ কিছু পোজ দেন। ফটোসেশন চলতে চলতে প্রায় দশ মিনিট কেটে যায়। নিশ্চল ঝাড়ু মুখ গোমড়া করে মাটিতে নেতিয়ে থাকে। ফটোসেশন শেষ। ঝাড়ুটা পাশে সরিয়ে সবাই করমর্দন করেন। মাইক্রোফোনে ভেসে ওঠে গুরুগম্ভীর শব্দ। বারবার করতালির আওয়াজ ওঠে। মিষ্ঠিমুখ, উদরপূর্তি সব সম্পন্ন হয় সুচারুভাবে। তারপর জায়গাটা আগের মতো নীরব হয়ে যায়।
     সকালে চায়ের কাপ হাতে তারিয়ে তারিয়ে খবরটা পড়ছিল অরিন্দম। সাফাই অভিযানের খবর ছবি সহ কয়েকটি কাগজে বেরিয়েছে। দারুন দারুন সব কথা লিখেছে তাকে নিয়ে। পড়তে পড়তে এক ভালোলাগার রাজ্যে হারিয়ে যায় অরিন্দম।
     ‘দাদা?’
     ভাবনার জাল ছিন্ন হয় অরিন্দমের। দেখে সুবল দাঁড়িয়ে।
     ‘কী ব্যাপার?’
     ‘আমাদের টাকাটা।’
     একটা পাঁচশো টাকার নোট বাড়িয়ে দেয় অরিন্দম।
     ‘পাঁচশো! আমরা পাঁচজন লোক সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করেছি। দেড় হাজার লাগবে।’
     ‘এই সামান্য কাজের জন্য দেড় হাজার!’
     ‘আপনি বলেছিলেন টাকা নিয়ে সমস্যা হবে না।’
     ‘সমস্যা তো করছি না। নাহ্য পারিশ্রমিক দিচ্ছি। নিতে হয় নাও, নাহলে বিদেয় হও।’
     ‘এখন তাই বলবেন। আপনার কাজ তো হয়ে গেছে।’
     ‘কী বলতে চাইছো?
     যা বলতে চাইছি আপনি বুঝতে পারছেন।’
     ‘ননসেন্স! শালা, সকালের মুডডাই নষ্ট। যতসব অপকর্মার দল।’
     উঠে পড়ে অরিন্দম। ঘরের দিকে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ান সুবলের ডাকে।
     নোটটা ফিরিয়ে দিয়ে সুবল বলে, এটা রাখুন। দরকার নেই। সমাজের জন্য না হয় একদিন বেগার খাটলাম।’ বলেই হনহন করে এগিয়ে যায়।

No comments:

Post a Comment