দেবতার দূত খোলা আকাশের নীচে...
![]() |
(ছবিটি প্রসেনজিৎ মাইতির টাইম লাইন থেকে নেওয়া) |
হ্যাঁ, খাচ্ছে লোকটি।
শরীরে পুলিশের ইউনিফরম। ছবিটা দেখে মনে হয় রাত্রির।
ইঁট বাঁধানো মেঝের ওপর কোনোরকমে একটু হাঁটু মুড়ে বসেছে লোকটি। এক
চিলতে আলোয় তার মুখটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না।
তার চোখে-মুখে কি ক্লান্তির ছবি? না, এরা ক্লান্ত নয়।
এদের এখন ক্লান্ত হলে চলে না। ক্লান্তিই
বরং এদের কাছে আজ হার মেনে গেছে।
লোকটি ঘাড় ঝুঁকে বসে।
কাঁধে একটা লাল কাপড়ের মতো। সম্ভবত
রুমাল কিংবা মাস্ক। সামনে রাস্তার ওপর একটুকরো কাগজ পাতা।
তার ওপর একটা পাতায় ভাত আর দুটো সবজি। পাশে একটা
জলের বোতল। খাচ্ছে লোকটি। এই
খাওয়ায়েরর পর কোনো বিছানা অপেক্ষা করে নেই তার জন্য।
তাকে পুনরায় ডিউটি করতে হবে। তাই
কোনোরকমে নাকেমুখে গুঁজে নিচ্ছে লোকটি। ওই খাওয়ারে
পেট ভরুক আর নাই ভরুক, কিছু করার নেই। পাস থেকে
কোনো প্রিয়জন বলবে না, আর একটু ভাত দিই। কিংবা বারণ
করা সত্ত্বেও কেউ জোর করে আর একটু সবজি ঢেলে দেবে না ভাতের ওপর। যা
আছে তাই মুখ বুজে খেতে হবে। কেননা আয়েশ
করে খাওয়ার সময় আর সুযোগ কোনোটাই নেই তার।
ওই লোকটির নিশ্চয়ই সংসার আছে।
হয়তো বাবা-মা আছে, স্ত্রী-সন্তান। কেউ না কেউ
তো আছে নিশ্চয়ই। তারাও কি পারছে ভালো করে খাওয়ার মুখে তুলতে? ভাইরাসের দাপটে গৃহবন্দী জীবন।
ঘরই আপাতত নিরাপদ আশ্রয়। ঘরের বাইরে পা দিতে গেলে মনের মাঝে
ভয় এসে উঁকি মারে কোথাও ওঁত পেতে নেই তো সেই অদৃশ্য দানব? আর সেখানে বাড়ির প্রিয় মানুষটি রাস্তায়, যে রাস্তা এখন মৃত্যুর ভয় দেখায়
প্রতি মুহূর্তে। এই অবস্থায় বাড়ির মানুষগুলোও ভালো
নেই একদম। ওদের ঘরে হয়তো পর্যাপ্ত খাওয়ার আছে।
তবুও ঠিকঠাক খেতে পারছে কি তারা?
লোকটি পুলিশে কাজ করে। তার তো ঘরে বসে থাকলে
চলবে না। তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সেই দায়িত্ব পালন করছে লোকটি। তার কাজের
মধ্যে কোনো বীরত্ব নেই, মহত্ব নেই। বরং কাজ না
করে ঘরে বসে থাকলে সেটাই আলোচিত হত বেশি। কিন্তু
একটা কথা না ভেবে পারছি না, আমরা যখন নিরাপদে ঘরের মধ্যে থাকতে পারছি তখন ওই
মানুষগুলি খোলা আকাশের নীচে। শুনশান রাস্তায় লোকটিকে একা এক চিলতে আলোর নীচে
বসে রাতের খাওয়ার খেতে দেখে প্রসেনজিতের কথাকেই যেন সত্যি মনে হয়---সত্যিই এরা
দেবদূত। হয়তো পেশার দায়, তবুও এটা তো ঠিক আমাদের
নিরাপদে রাখার জন্য এরাই এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করে চলেছে খোলা আকাশের নীচে।
মারণ ভাইরাসের ভয় এদের মনেও আছে নিশ্চয়ই। সেই ভয়
বুকের মাজে চাপা দিয়ে কর্তব্য পালন করে যাওয়া মানুষগুলোকে সত্যি সত্যি দেবদূত মনে
হয়।
একদিন এই দূর্যোগ কেটে যাবে।
স্বাভাবিক হবে জীবন। সেদিন হয়তো কোনো তুচ্ছ কারণে
এইসব মানুষগুলিকে আমরা গালমন্দ করব। এই অনুভব
হয়তো সেদিন মরে যাবে। জানি না আগামীর কথা। ভুল থেকে যেমন শিক্ষা নেওয়া যায় তেমনি ভয়
থেকেও। এই ভাইরাস ভয় আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিচ্ছে।
আমরা কতটুকু সেই শিক্ষা নিতে পারব জানি না। কিন্তু
বর্তমানে সংকটের এই ঘোর অন্ধকারে এই সমস্ত মানুষগুলো টুকরো টুকরো আলো হয়ে
আমাদের ভরসা জোগাচ্ছেন। এদের জন্য রইল আন্তরিক শ্রদ্ধা ও
শুভকামনা।
যুদ্ধ চলছে।
সবাই লড়াই করছে। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে মানুষগুলো ময়দানে নেমে
লড়াই করছে, তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।
প্রার্থনা করি, তারা যেন সুস্থ থাকেন। এই যুদ্ধে
তাদের হাতে লেখা হোক বিজয়ের ইতিহাস। কেননা
তাদের সাফল্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের আগামীর আলো।
No comments:
Post a Comment