ইনফ্যাচুয়েশন
সৌরভকুমার
ভূঞ্যা
করব
না, করব না করেও লিখেই ফেলে প্রিয়তোষ, ‘হাই, কেমন আছো?’
কিছুক্ষণের প্রতীক্ষা। কিন্তু কোনো জবাব
নেই। জবাব যে আসবে না সে জানে। ছ-মাস আগে শেষবার মেসেজ করেছিল মানালীকে। জবাব
আসেনি। প্রিয়তোষ বুঝে পায়নি কেন। তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাঁটি, রাগ-অভিমান কিছুই
হয়নি। তবুও কেন যে মানালী এমন করে হঠাৎ চুপ করে গেল সে বুঝতে পারেনি। খুব খারাপ
লেগেছিল তার। প্রথম প্রথম এনিয়ে অনেক ভেবেছে। তারপর একসময় ব্যাপারটা মাথা থেকে
চলেও গিয়েছিল।
ফেসবুকেই মানালীর সঙ্গে পরিচয় প্রিয়তোষের।
অল্পদিনের কথাবার্তায় দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। কথাবার্তা বলতে
চ্যাট। সাধারণ কথাবার্তার পাশাপাশি একে-আপরের অনেক সুখ-দুঃখের কথাও তারা শেয়ার
করত। প্রিয়তোষ বিবাহিত, মানালীও তাই। তবে এটা কখনও তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে
দাঁড়ায়নি। ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে দুজনেই সচেতন ছিল। যাই হোক, সারাদিনে অন্তত একবার
চ্যাটিং হত তাদের। কখনও কখনও সময়ের হিসেব ভুলে দুজনের আঙুলে উঠত ঝড়। তারপর হঠাৎ
করেই মানালী চুপ। কোনো মেসেজ নেই। প্রিয়তোষ কয়েকবার জানতে চেয়েছে কারণটা কিন্তু
মানালীর দিক থেকে কোনো জবাব আসেনি। খুব খারাপ লেগেছিল তার। তার শুধু জানতে ইচ্ছে
করছিল কারণটা কিন্তু যার দেওয়ার কথা, সে যেন প্রতিজ্ঞাই করেছিল, আর কোনোদিন
প্রিয়তোষের মেসেজের জবাব দেবে না।
‘আছি মোটামুটি। আপনি কেমন আছেন?’
প্রিয়তোষ মানালীকে ‘তুমি’ বললেও মানালী তাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করে। এটা
মানালীর ব্যাবস্থাপনা।
চমকে ওঠে প্রিয়তোষ। অবিশ্বাস্য মনে হলেও
সত্যিটা তাকে বিশ্বাস করতে হয়। মানালী জবাব দিয়েছে। ভালোলাগার এক অদ্ভুত আবেগ
তাকে জড়িয়ে ধরে। যে আবেগে হারিয়ে যায় মনের মধ্যেকার অভিমানগুলো। বেশ কিছুক্ষণ
এটা-ওটা কথাবার্তার পর আসল প্রশ্নটা করেই ফেলে প্রিয়তোষ, ‘হঠাৎ করে এতদিন চুপ!
বারবার বলেও কারণটা জানতে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। বলবে কি, আমার অপরাধ কী ছিল?’
‘প্লিজ, এরকম বলবেন না। আপনার কোনো অপরাধ
নেই।’
‘তাহলে? আমার মনে হয় এখন আর তুমি আমার সঙ্গে
চ্যাট করতে চাও না। আমিই হয়তো বাধ্য করলাম।’
‘না, বাধ্য করার প্রশ্ন নেই। তবে সত্যিই একটা
সময় আমি চাইতাম না আর আপনার সঙ্গে চ্যাট করতে। আমার কষ্ট হত। আমি সহ্য করতে পারতাম
না। তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।’
‘কষ্ট! আমি কষ্ট দিয়েছি!’
‘না, আপনি দেননি। আমি নিজেই নিজের কষ্টের
কারণ। আসলে বুঝতে পারিনি, কখন অজান্তে আপনার সঙ্গে মানসিকভাবে গভীরভাবে জড়িয়ে
পড়েছি। আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আমি বাস্তবটা জানি। তাই মনে হয়েছিল সরে
আসা উচিত।’
আবেগ সংযত করতে একটু সময় লাগে প্রিয়তোষের।
তারপর বলে, ‘তাহলে আজ জবাব দিলে কেন?’
কিছুক্ষণের নীরবতার পর ছোট্ট মেসেজ, ‘সরে
এসেও ইনফ্যাচুয়েশন থেকে মুক্ত হতে পারলাম কই! আপনার প্রতি আমার সেই আবেগ আর অনুভব আজও
অম্লান।’
প্রিয়তোষ চুপ। জবাব দেওয়ার শব্দ খুঁজে পায় না
সে।
No comments:
Post a Comment