কৃতিত্ব
সৌরভকুমার ভূঞ্যা
পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে
আসতে না আসতেই একঝাঁক নারী-পুরুষ ঘিরে ধরে সঞ্জয়কে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। স্বয়ং
প্রিন্সাপালও রয়েছেন।
‘কেমন পরীক্ষা হয়েছে? সব ঠিকঠাক লিখেছ?
রিভাইজ করেছ?’ একসঙ্গে অনেক প্রশ্ন।
‘তোমার ওপর আমাদের অনেক আশা।’ প্রিন্সপ্যাল
মুখ খোলেন। ‘এই স্কুলের নাম তুমিই উজ্জ্বল করবে।’ একটু থেমে বলেন, ‘বাকি
পরীক্ষাগুলো ঠিকঠাক দিও। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে। প্রয়োজনে আমি
স্যার-ম্যাডামদের তোমার বাড়ি পাঠিয়ে দেব। তুমি শুধু পরীক্ষাটা ঠিকঠাক দেবে।’
ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ভিআইপি সঞ্জয় হুঁ-হাঁ করে
কেবল মাথা নাড়ছিল। বাকি ছেলেমেয়েরা পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে উঁকি মারে। তাদের
দিকে কারও তেমন নজর নেই।
দৃশ্যটি দিনের পর দিন চলতে থাকে। কেবল শেষদিন
শব্দগুলো কিছু বদলে গেল।
মেধা তালিকায় নাম বেরিয়েছে সঞ্জয়ের। অষ্টম
হয়েছে সে। স্কুলে উত্সবের মেজাজ। সবাই প্রতীক্ষায় কখন সঞ্জয় আসবে। তাকে ফুল-চন্দনে
বরণ করে নেওয়া হবে। প্রতীক্ষা দীর্ঘ্য হয় কিন্তু সঞ্জয় আসেন না। আসার উপায়ও ছিল না।
একটি নিউজ চ্যানেলের কৃতিকথায় অনেকের সঙ্গে
সঞ্জয়।
‘কেমন লাগছে এমন ফলে?’ সঞ্চালিকা জিজ্ঞাসা
করে।
‘দারুন।’
‘সারাদিনে কত ঘন্টা পড়তে?’
‘খাওয়া-ঘুমোনোর সময় বাদে বাকি সময়টা।’
‘প্রাইভেট টিউটর কতজন ছিল?’
‘সব বিষয়ে একজন করে। ম্যাথ আর ফিজিক্সে দুজন।’
‘এই ফলে তোমার স্কুলের অবদান কতখানি?’
‘স্কুলের অবদান অনেকটাই। স্কুল যদি না আমাকে
পুরো ক্লাস রিলিফ দিতে আমি তাহলে এতটা পড়ার সময় পেতাম না।’
টিভিতে সম্প্রচার চলছে। স্কুলের
শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বসে দেখছে। শুধু উত্সবের আবহটা হারিয়ে গেছে।
No comments:
Post a Comment